রাজস্থানের এক অচেনা গ্রাম খিচন | Khichan Tour Offbeat Rajasthan

Khichan Offbeat Rajasthan


রাজস্থান বেড়াতে যাবেন ভাবছেন? রাজার স্থান রাজস্থান (Rajasthan), রাণীদের আত্মত্যাগ , রাজাদের পরাক্রম, দুর্গ, হাভেলি আর মরুভূমির দেশ রাজস্থান। একথা আমরা সবাই জানি। তবে খিচনের কথা অনেকের অজানা। রাজস্থানের এমনই এক নাম না জানা গ্রামে থাকেন একজন নায়ক যিনি জয় করেছেন সুদূর মঙ্গোলিয়ান! বিকানীর থেকে জয়সলমীর যারা যাবার কথা ভাবছেন তারা অন্ততঃ একটা দিন বাড়তি রাখবেন খিচনের জন্য। কথা দিচ্ছি, ঠকবেন না। এই একটা দিনের জন্যই ধন্য হয়ে যেতে পারে আপনার রাজস্থান ভ্রমণ


পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য খিচন গ্রাম | Khichan- Paradise of Birds

পশ্চিম রাজস্থানের এক অচেনা গ্রাম খিচন (Khichan)----বিকানীর-পোখরান-জয়সলমীর পথে। বিকানীর থেকে NH-15 ধরে ফালুডি যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাগে। ফালুডি পৌঁছে যে কোনো অটোতে মাত্র ৪ কিমি দূরে খিচন। পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য।

মার্চের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি --- এই পাঁচ মাস খিচন আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতো। গেলে কিছুই বোঝা যাবেনা। যেন শীতঘুমে থাকে। অপেক্ষা চলতে থাকে। তারপর আগস্টের একদিন সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে। মাত্র ১৮-২o টি মঙ্গোলিয়ান ক্রেণ (Mongolian Crane) দেখতে আসে তাদের শীতকালীন আবাস আগের মতোই সুরক্ষিত কিনা। ক্র….ক্র আওয়াজ করতে করতে ঘুরতে থাকে। তারপর খবর চলে যায় অন্যদের কাছেও।

ক্রমশঃ বাড়তে থাকে পাখিদের সংখ্যা। ৫,০০০ , ৬,০০০ তারপর ১৫,০০০ ! ডিসেম্বর মাসে গেলে প্রায় ১৫,০০০ এরও বেশি মঙ্গোলিয়ান ক্রেনের ক্র….ক্র ডাকে মুখরিত থাকে খিচনের আকাশ-বাতাস। এই সংখ্যা সর্বাধিক হয় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। প্রায় ৩০,০০০-৪০,০০০ !

তারপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে একে একে চলে যেতে থাকে তাদের নিজেদের দেশে। এইভাবে মার্চ মাসে সব ফাঁকা। আবার চলে অপেক্ষা। এইভাবেই চলে আসছে বহুদিন ধরে। 

কোনো এক সময় পাখিদের খাওয়ানোর প্রথা (ritual) থেকেই এইসব পাখিদের আগমন শুরু হয়। ধীরে ধীরে পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

খিচন গ্রাম-এর সেবারাম মালি | Sebaram Mali Khichan , Rajasthan

এই পাখিদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে চলেছেন সেবারাম মালি আর তার গ্রামবাসী।তার প্রায় ২৫ বছরের লড়াই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করেছে পাখিদের আগমন।

পাখিদের সুরক্ষার জন্য কি না করেছেন সেবারাম---- গ্রামের উন্মুক্ত ইলেকট্রিক তারে আগে প্রচুর পাখির মৃত্যু হত। তাই একে একে সরিয়ে ফেলেছেন প্রায় সব ইলেক্ট্রিক তার, বদলে কেবল-লাইন হয়েছে। জমিতে পেস্টিসাইড ব্যবহার অনেক কমিয়ে এনেছেন।

আর এসব এমনি এমনি হয়নি---- অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে, এখনও করে চলেছেন। সাতবার হেরিটেজ পুরস্কার পেয়েছেন সেবারাম। সেবারাম মালির বাড়ির পাশেই পাখিদের খাওয়ার জায়গা পক্ষী চুগগাঘর। 

রাজস্থানের এক অচেনা গ্রাম খিচন

মঙ্গোলিয়ান ক্রেণগুলি (Mongolian crane) সাইবেরিয়ান ক্রেণদের (Siberian crane) মতো ধবধবে সাদা নয়। মাথা আর গলার কাছটা কালো আর শরীরটা স্লেট কালার । দূর থেকে অনেক পাখি একসঙ্গে দেখলে একটা সবজে-নীল আভার ঢেউ মনে হয়। এরা ডেমোসেল ক্রেণ (Demoselle Crane) বলেই পৃথিবীতে অধিক পরিচিত। এরা লবণাক্ত জায়গায় থাকতে পছন্দ করে এবং লবণাক্ত খাবার খেতেও পছন্দ করে। প্রতিদিন ভোর ৬-টার পর থেকে একটা দুটো করে পাখির ডাক শোনা যায়।

সেবারামজি প্রতিদিন নোট করেন প্রথম পাখি কটার সময় এলো। প্রথম পাখি যখন আসে তখনও দিনের আলো ফোটেনা ভালো করে খিচন-এ। কিন্তু পাখিদের সেবায় নিবেদিত প্রাণ সেবারামজি সদা-সতর্ক। কোনো পাখির মৃত্যুর কারণ বুঝতে না পারলে তার পোস্টমর্টেম পর্যন্ত করিয়ে ছাড়েন! এখন আহত পাখিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে ওনার একান্ত প্রচেষ্টায়।

শুধু পাখি নয়, বাছুর-ছাগল-গরু এমনকি সাপের জন্যও তাঁর চিন্তা! এমন মানুষের বাড়িতে থাকা খাওয়া আর পাখিদের জন্য তাঁর সংগ্রামের গল্প শোনা সত্যিই এক বিরল অভিজ্ঞতা। 


খিচন গ্রামের এক বিরল অভিজ্ঞতা ।An Unforgettable Experience in Khichan ,Rajasthan

আমরা খিচন পৌঁছই বেলা ১০-৩০ নাগাদ। অটো আমাদের নামিয়ে দেয় সেবারামজির দোরগোড়ায়। দেখা হওয়ার সাথে সাথেই অন্য কোনো কথা নয়---- শুধু বলেন, "জলদি যাইয়ে , নজারা দেখিয়ে!" উঠে যাই ছাদে। গিয়ে হতবাক! ক - ত পাখি বসে আছে পিছনের মাঠে প্রায় ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব। ঝাঁক ঝাঁক পাখি উড়তে থাকে আকাশে, তারপর একে একে এসে বসে চুগগাঘরের সামনে (খাওয়ার ঘর)। এক উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। তাদের সমস্বরে চিৎকার শুনে মনে হয় আমরা ইডেনে খেলা দেখছি আর সৌরভ ৬ মারছে! এক অনাস্বাদিত পূর্ব অভিজ্ঞতা! একসঙ্গে তারা যখন আকাশ অন্ধকার করে মাথার ওপর দিয়ে উড়তে থাকে সে দৃশ্য ভোলার নয়। 

An Unforgettable Experience in Khichan


পাখি দেখার সেরা সময় | Best Time to Visit Khichan Rajasthan

প্রতিদিন বেলা ১০ টা থেকে ১১-৩০ টা পর্যন্ত পাখিদের এই শোভা দেখার মতো। তারপর আস্তে আস্তে মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। তারা উড়ে যায় প্রায় ৩৫ কিমি দূরে লবণাক্ত কোনো জায়গায়। আবার বিকেলবেলা দেখা যায়, বিজয়সাগর লেকের ধারে তাদের আসর বসে। এই জলাশয় সেবারামজির বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিমি। গ্রামের মধ্যে দিয়ে হাঁটাপথ। একটা নজরমিনার (watch tower) আছে। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্যও সুন্দর। সূর্যাস্তের পর আবার তারা দলে দলে উড়ে যায়। এমনভাবেই চলতে থাকে আগস্ট থেকে মার্চ।

শুনলাম দিল্লীর একজন প্রফেসর কাম ফটোগ্রাফার দু-মাসের জন্য বুকিং করেছেন আমাদের পাশের ঘরটি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ। এই দু-মাসই পাখি দেখার সব থেকে ভালো সময়। সেবারামজির বাড়ির ছাদ থেকে ডিসকভারি , ন্যাশনাল জিওগ্রাফির শ্যুটিংও হয়েছে বিরল প্রজাতির এই ডেমোসেল ক্রেণদের নিয়ে।

খিচন গ্রাম রাজস্থান কিভাবে যাবেন | How to Reach Khichan Rajasthan

বিকানীর থেকে জয়সলমীর যাওয়ার পথে ফালুডি পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে-তিন ঘণ্টা। ফালুডি থেকে মাত্র চার কিমি খিচন গ্রাম। খিচনে পৌঁছতে হবে বেলা ১০-টা নাগাদ। তারপর মাত্র দেড়-ঘণ্টা সেবারামজির বাড়ির ছাদে গিয়ে বসলেই হাজার-হাজার মঙ্গোলিয়ান ক্রেণ দেখার সৌভাগ্য হবে।

খিচন গ্রাম রাজস্থান কখন যাবেন | Best time to see Mongolian Crane at Khichan Rajasthan

খিচনে পাখি দেখার জন্য সব থেকে ভালো সময় ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি। রাজস্থান ঘোরার জন্যও এই তিন মাস সব থেকে উপযুক্ত সময়।


প্রয়োজনীয় দূরত্ব | Distance between related places

  • বিকানীর থেকে জয়সলমীর ৩৩০ কিমি | Bikaner to Jaisalmer 330 k.m.
  • বিকানীর থেকে পোখরান ২১৯ কিমি | Bikaner to Pokhran 219 k.m.
  • পোখরান থেকে জয়সলমীর ১১১ কিমি | Pokhran to Jaisalmer 111 k.m.
  • বিকানীর থেকে ফালুডি ১৬২ কিমি | Bikaner to Phalodi 162 k.m.
  • ফালুডি থেকে পোখরান ৫৭ কিমি | Phalodi to Pokhran 57 k.m.
  • যোধপুর থেকেও ফালুডি পৌঁছনো যায়, দূরত্ব ১২০ কিমি। Jodhpur to Phalodi 120 k.m.
  • ফালুডি থেকে জয়সলমীরের দূরত্ব ১৬৮ কিমি। Phalodi to Jaisalmer 168 k.m.


যোগাযোগ | Contact Person at Khichan Rajasthan

সেবারাম মালি | Sebaram Mali

Ph no: +919982372596

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন