মুন্সিয়ারি | Munsiyari A Paradise for Trekkers

মুন্সিয়ারির  ভ্রমণ গাইড । Travel Guide To Munsiyari

Travel Guide To Munsiyari
মুন্সিয়ারি

কালামুনি টপ থেকে পঞ্চচুল্লি দর্শন | Panchachuli Peak from Kalamuni Top

বিরথির কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের(KMVN) ট্যুরিস্ট লজের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি মুন্সিয়ারি যাওয়ার বাসের  জন্য। আবার শুরু হল দুর্গম পথে উত্তরণ। বাস কালামুনি টপে পৌঁছনোর আগে থেকেই পথের দুপাশে বরফ চোখে পড়ল।  আর আমরা সমতলবাসীরা বরফ দেখলেই কেমন আত্মহারা হয়ে যাই। মুন্সিয়ারির ১৫ কিমি আগে কালামুনি টপের উচ্চতা ৯,৫০০ ফুট। এখানে বেশিরভাগ বাস চা-পানের বিরতির জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। সামনেই সিংহবাহিনী দেবীর মন্দির আর উত্তুঙ্গ পঞ্চচুল্লির অমলধবল রূপ। এখান থেকে আরো  ১৭ কিমি দূরে মুন্সিয়ারি। বাস নীচে নামতে শুরু করে। পথের দু-পাশে ধবধবে সাদা বরফ দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। কৌশানিতে যখন বৃষ্টি পড়ছিল, চৌকরির মুখ ভার ছিল----তখন মুন্সিয়ারিতে বরফ পড়ছিল। তাই তো কথায় বলে, "মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।" পঞ্চচুল্লির পাঁচ শিখরে মেঘের লেশ-মাত্র নেই। দু-দিন আগে বৃষ্টিতে সব গ্লানি ধুয়ে মুছে গেছে। 

{tocify} $title={Table of Contents}

মুন্সিয়ারি থেকে সূর্যাস্ত
সূর্যাস্ত

মুন্সিয়ারি থেকে সূর্যাস্ত

মুন্সিয়ারির বাসস্ট্যান্ড থেকেও হাতের নাগালে পঞ্চচুল্লি। মুন্সিয়ারির উচ্চতা ৭,২০০ ফুট। এখানকার বেশিরভাগ হোটেলের ঘর থেকে বরফমোড়া পঞ্চচুল্লি উপভোগ করা যায়, আর ছাদ থাকলে তো কথাই নেই। শুধু চোখের সামনে সোজাসুজি হিমালয়---- পঞ্চচুল্লির সঙ্গে হংসলিংগ, রাজরম্ভা, চিপলাকোট প্রভৃতি শৃঙ্গগুলিও খুব সুন্দর দৃশ্যমান। মুন্সিয়ারি থেকে যখন সূর্যদেব অস্তমিত হলেন রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন ভুবন-- কত রং! সব রং কি বলা যায়! সোনাঝরা গোধূলির আলো ফিকে হয়ে আসতে মনে হল দেবাত্মা হিমালয়ের আশীর্বাদ না থাকলে এ জীবনে তার এমন রূপ দেখতে পেতাম না। এই ভালোলাগার অনুভূতি আমার সারাজীবনের সঞ্চয়। 

মুন্সিয়ারিকে ঘিরে | Munsiyari Sightseeing 

মুন্সিয়ারি থেকে ৭ কিমি হাঁটাপথে পৌঁছে যাওয়া যায় খালিয়া টপে। এখানেও KMVN-এর ট্যুরিস্ট লজ আছে , টেন্ট-এও থাকা যায়। এখান থেকেও পঞ্চচুল্লি, হরদেওল, রাজরম্ভা, নন্দাকোট শৃঙ্গগুলি একদম হাতের নাগালে। খালিয়া টপের উচ্চতা ১১,৫০০ ফুট। এখানে বিভিন্ন হিমালয়ের পাখির দেখা পাওয়া যায়, কপাল ভালো থাকলে মোনালের দেখা মেলে।

কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসা যায় ট্রাইবাল হেরিটেজ মিউজিয়াম থেকে। মুন্সিয়ারিতে দু-তিনদিন থাকলে ঘুরে দেখা যায় দারকোট, মদকোট গ্রামগুলি। এই গ্রামগুলি কোন দ্রষ্টব্য স্থান নাহলেও হিমালয়ের এত গহিনে গ্রামগুলির, গ্রামের মানুষের, গ্রামের মন্দিরগুলির একটা আলাদা মাধুর্য্য আছে । আর প্রধান লক্ষ্য যাওয়া-আসার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা।

নন্দাদেবী মন্দির | Nanda Devi Temple

   সকালে হাঁটতে হাঁটতে চলি নন্দাদেবী মন্দির দর্শনে। আমাদের পাশে পাশে চলেছে পঞ্চচুল্লি। যত এগোচ্ছি মনে হচ্ছে তত সামনে এগিয়ে আসছে। মুন্সিয়ারির শোভাও অতুলনীয়। পেট্রোল-পাম্প পেরিয়ে আরো কিছুটা বনানী ছাওয়া পথ গেলে মন্দিরের প্রবেশ দ্বার। জনবসতি থেকে কিছুটা দূরে বিস্তীর্ণ এক বুগিয়ালে সাদা নন্দাদেবীর মন্দির যেন পঞ্চচুল্লির কোল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে, ঠিক যেন প্রস্ফুটিত শ্বেত-পদ্ম। নীচে গৌরীগঙ্গার সবুজাভ জলধারা, দূরে পাহাড়ের ঢালে ধাপ কেটে চাষের জমি। এই গৌরীগঙ্গার পাড় ধরে শুরু হয়েছে মিলাম হিমবাহের ট্রেকপথ। অপার শান্তি বিরাজ করছে এখানে। সত্যি, ভগবান তো এমন জায়গাতেই থাকেন। ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে, নিজের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে এমন জায়গাই আদর্শ। কি নির্জন! কেবল সবুজ আর গৈরিক শান্তির প্রশান্তি। 

এবার ফেরার পালা

এই কিছুদিনে পঞ্চচুল্লির মায়ায় পড়ে গেছি, এখানে এসে প্রেমে পড়ে গেছি। ছেড়ে যেতে মন চায় না-- যেতে যেতেও বার বার পিছন ফিরে দেখছি। বিকেল থেকে আবার মেঘের দল ভিড় করে আসে। কি অদ্ভুত, প্রথমে এক টুকরো কালো মেঘ পাহাড়ের খাঁজে আটকে থাকে, ক্রমশঃ তা বাড়তে থাকে। আবার বৃষ্টি হবে--আবার বরফ পড়বে--এই খেলা তো চলতেই থাকবে। পঞ্চচুল্লি আমার মনের কথা টের পেয়ে চোখের আড়ালে চলে যেতে থাকে। আজই মুন্সিয়ারিতে আমাদের শেষ রাত। আগামীকাল পঞ্চচুল্লির মুখ না দেখেই ভোর সাড়ে চারটের বাস ধরতে হবে। ড্রাইভার সাহাবের সাথে মোটামুটি চেনা জানা হয়ে গেছে এই কদিনে। উনি বললেন, ওনার সঙ্গে চলে যেতে না হলে পরে জিপ পেতে অসুবিধা হতে পারে কারণ এই নভেম্বরের এই সময়টা বিয়ের মরসুম চলছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু কষ্ট হলেও নিশ্চিন্তে টানা বাগেশ্বর কি আরো এগিয়ে আলমোড়া পৌঁছে যেতে পারবো। রাতের অন্ধকারে পথের দুর্গমতা ভেবে ভয় লাগে কিন্তু আস্বস্ত হই এই ভেবে যে ড্রাইভার সাহাব এ পথে দৈনন্দিন যাতায়াত করছেন। রুটের বাস বা জিপে ঘোরার এটা একটা বড় সুবিধা। কিন্তু দল বড়ো হলে সময় আর পরিশ্রম বাঁচাতে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া ভালো। দু-তিনজন হলে গাড়ি ভাড়া ব্যয়বহুল। স্থানীয় বাস/গাড়িতে ঘুরতে সময় বেশি লাগে , ধকল ও বেশি হয় তবে অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি হয়। স্থানীয় মানুষদের সংস্পর্শে আসা যায়। ওনাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা সারা জীবনের সঞ্চয়। আবার নতুন করে এসব দুর্গম পথে পা বাড়াতে ভীষণ সাহায্য করে। হিমালয় মানে যেমন পাহাড় গাছপালা নদী ফুল পাখি তেমনি এই পাহাড়ি মানুষগুলোও। তাই স্থানীয় বাসে ঘুরে বেরালে স্থানীয় মানুষের সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি আসা যায়। যা আমার বড়োই প্রিয়। এইভাবে ঘোরার একটা আলাদা মজা বা টান আছে। এক আকাশ তারা মাথায় করে উঠে বসি বাসে। বাস ছাড়তে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত পাহাড়, উপত্যকা, মুন্সিয়ারিকে বিদায় জানাই

Munsiyari A Paradise for Trekkers
সূর্যাস্তে পঞ্চচুল্লি

কিভাবে যাবেন | How to reach  Munsiyari .

মুন্সিয়ারি দু-দিক দিয়ে পৌঁছনো যায়। 

প্রথম পথ:
হলদোয়ানি/কাঠগোদাম/লালকুঁয়া স্টেশন থেকে আলমোড়া, চৌকরি হয়ে মুন্সিয়ারি। (হলদোয়ানি থেকে বাস বা শেয়ার জিপ পেতে বেশি সুবিধা হয়)

দ্বিতীয় পথ:
টনকপুর স্টেশনে নেমে লোহাঘাট, পিথোরাগড় হয়ে মুন্সিয়ারি।

এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফেরা যায়। অর্থাৎ টনকপুর দিয়ে ঢুকে কাঠগোদাম/লালকুঁয়া হয়ে ফেরা।

টনকপুর-পিথোরাগড়-মুন্সিয়ারি-আলমোড়া-কাঠগোদাম/ লালকুঁয়া।

দিল্লী/বেরিলি থেকেও বাস যাচ্ছে আলমোড়া, পিথোরাগড়, মুন্সিয়ারি। তবে এতটা পথ টানা বাস যাত্রা না করাই ভালো। 

মুন্সিয়ারির কাছাকাছি বিমানবন্দর পন্থনগর। এখান থেকে মুন্সিয়ারি ২৫০ কিমি। 

কখন যাবেন | Best time to visit Munsiyari .

মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি আবার অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। খুব ঠান্ডার সময় না গেলেই ভালো। বরফ পড়ে রাস্তা আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ভারী বর্ষার সময় যাওয়া উচিত নয়। পথ বিপদজনক হয়ে পড়ে। 

কোথায় থাকবেন | Hotels  Munsiyari.

মুন্সিয়ারিতে অনেক বেসরকারি হোটেল আছে । কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের (KMVN) ট্যুরিস্ট লজ আছে। খালিয়া টপে KMVN-এর লজ আছে।

প্রয়োজনীয় দূরত্ব | Distance between 

  • হলদোয়ানি থেকে মুন্সিয়ারি ৩১৫ কিমি. Haldwani to Munsiyari 315 k.m.
  • আলমোড়া থেকে মুন্সিয়ারি ২২০ কিমি. Munsiyari to Almora 220 k.m.
  • টনকপুর থেকে মুন্সিয়ারি ২৮০ কিমি. Tanakpur to Munsiyari 280 k.m.
  • পিথোরাগড় থেকে মুন্সিয়ারি ১৩০ কিমি. Pithoragarh to Munsiyari 130 k.m.
  • পন্থনগর থেকে মুন্সিয়ারি  ২৫০ কিমি. Pantnagar to Munsiyari 250 k.m.
আরও পড়ুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন