গনগনি, গড়বেতা পশ্চিম-মেদিনীপুর ভ্রমণ | Gangani the Grand Canyon of Bengal

Gangani Garbeta West Midnapore Tour Plan

সূর্যোদয়ে ও সূর্যাস্তে গনগনি । Sun Set and Sun Rise at Gangani

বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে অনেকেই গেছেন। কিন্তু বাঁকুড়ার খুব কাছেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গনগনির কথা অনেকেরই অজানা।  গনগনির নিকটতম রেলস্টেশন গড়বেতা। আবার বিষ্ণুপুর থেকে গনগনি ঘুরে আবার বিষ্ণুপুরে ফিরে আসা যায়। দূরত্ব মাত্র আঠাশ কিমি। কিন্তু গড়বেতায় একরাত থাকতে পারলে অভিজ্ঞতা আরো সুন্দর হবে। গনগনিকে ঠিকমতো উপলব্ধি করার জন্য একবার বিকেলে সূর্যাস্তের সময় আর একবার সকালে সূর্যোদয়ের সময় থাকা জরুরি।  দুপুর দুপুর গিয়ে সূর্যাস্ত হলে ফিরে আসা , আবার সকালে সূর্যোদয়ের সময় গিয়ে রোদ্দুর চড়া হলে ফিরে আসা। দুবার দুরকম অনুভূতি হবে। 

কিভাবে যাবেন কখন যাবেন থাকা-খাওয়া ইত্যাদি। How to reach Gangani.

রূপসী বাংলা , আরণ্যক ইত্যাদি পুরুলিয়াগামী ট্রেনে চেপে মাত্র তিন ঘন্টা পর নেমে পড়ুন গড়বেতা স্টেশন। স্টেশন থেকে রিক্সয় প্রায় তিন কিমি গেলে কলেজ মোড়। কলেজ মোড় থেকে মাত্র এক কিমি হেঁটেই পৌঁছে যেতে পারেন গনগনির অদ্ভুত ভূমিরূপের সামনে। স্টেশন থেকে কলেজ মোড় যাওয়ার পথেই একটু আগে বাঁ দিকে দেখতে পাবেন শ্রী শ্যাম সংঘ আশ্রম। এইখানেই থেকে যান একটা দিন ও রাত। সবরকমের ঘর আছে। বেশ নিরিবিলি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আশ্রমটি প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে যাওয়ার মতো।

খুব গরমের সময় গনগনে হলকা প্রবাহের জন্য জায়গাটির নাম গনগনি। তাই ওই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে আমরা গিয়েছিলাম মে মাসের শেষে। তখন ভালোই গরম ছিল। কারণটা ছিল ভিড় এড়িয়ে চলা। আসলে শীতকালে জায়গাটা পিকনিক স্পট এ পরিণত হয়। দেখলে খুব কষ্ট লাগে এত সুন্দর একটা জায়গা নোংরা আবর্জনায় কিভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে সেখানে ভাঙা কাঁচের টুকরো। প্লাস্টিকের কাপ, থালায় পরিপূর্ণ। বর্ষাকালে গর্জে জল থাকে তাই এই সময়টা একটু অসুবিধাজনক। তাছাড়া মেঘলা থাকলে গনগনির রূপ খোলেনা, ম্যাড়ম্যাড় করে। রোদ্দুর পড়লে সোনালী বর্ণ ধারণ করে । নভেম্বর থেকে এপ্রিলের শুরুর দিক পর্যন্ত বেড়ানোর ভালো সময়। শ্রী শ্যাম সংঘ আশ্রমে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। পাশের একটা ছোট দোকানে খুব সাধারণ মাছ ভাত পাবেন । নাহলে অটো/রিকশায় চলে যেতে পারেন স্টেশনের কাছে বাজার চত্বরে। 

Gangani Garbeta West Midnapore
বকাসুরের গুহা

ইতিহাস-ভূগোল আর রূপকথার মেলবন্ধন | Grand Canyon of Bengal.

কলেজ মোড় থেকে লাল রাস্তা ধরে দুপাশে কাজুগাছের সারি পেরিয়ে, আরো এগিয়ে গনগনির মাঠ। হঠাৎ করেই একদম অন্যরকম দৃশ্য। মনে হতে পারে , প্রাচীনকালের কোনো হারিয়ে যাওয়া সভ্যতায় এসে পড়লাম! বাঁধানো সুন্দর সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া যায় একেবারে গর্জের মধ্যে। গনগনিকে বাংলার গ্রান্ড ক্যানিয়ন বলা হয়। প্রকৃতির ক্যানভাসে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বহুদিনের ভূমিক্ষয় এর ফসল এই গনগনি। শিলাবতী নদী তার চলার পথে আশ্চর্য সুন্দর ভূমিরূপ তৈরি করেছে--- কোথাও মনে হবে প্রাসাদ, কোথাও গুহা, কোথাও কোনো প্রাণীর মুখ, কোথাও পাহাড় আরো কত কি! এখানেই নাকি মহাভারত খ্যাত বকাসুরের গুহা, যাকে ভীম বধ করেছিলেন।আবার চূয়াড় বিদ্রোহের নীরব ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই মাঠটির সাথে। জনপ্রিয় সিরিয়াল কিরণমালার শ্যুটিং ও হয়েছিল এখানে। সত্যিই যেন রূপকথার আদর্শ প্রেক্ষাপট। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সেই ছোটবেলায় দেখা চিচিংফাঁকের কথা মনে পড়বেই অথবা আলিবাবা চল্লিশ চোরের সেই গুহার কথা। এমনি করেই রূপকথা , পুরাণ, ইতিহাসের অলিগলি ঘুরে বাঁকানো সিঁড়ি পথে আবার বাস্তবে ফিরে আসা। সূর্যাস্তের সময় গনগনি থেকে শিলাবতীর প্রেক্ষাপট অপরূপ লাগে। তবে সূর্যাস্তের সময় গর্জ থেকে ওপরে উঠে আসতে হবে, নাহলে কিছুই বোঝা যাবেনা। 

আপনি যদি আরিজোনার গ্রান্ড ক্যানিয়ন না দেখে থাকেন তবে অবশ্যই তার ক্ষুদ্র সংস্করণ দেখে আসুন। যেখানে ভাষা ফুরিয়ে যায়, ছবি কথা বলে।।

Shyam Bhawan
শ্রী শ্যাম ভবন

পড়ুনঃ 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন