পঞ্চচুল্লি বেস-ক্যাম্প ডারমা উপত্যকা | Panchachuli Base Camp

Panchachuli Base Camp
দুগতু থেকে বেস-ক্যাম্প এর পথে

আমাদের গন্তব্য পঞ্চচুল্লি বেস-ক্যাম্প (Panchachuli Base Camp) যা পিথোরাগড় হয়ে যেতে হয়।  পিথোরাগড় পৌঁছনো যায় দু-ভাবে। হলদোয়ানি থেকে আলমোড়া হয়ে প্রায় ২১৫ কিমি, নাহলে টনকপুর থেকে লোহাঘাট হয়ে পিথোরাগড়ের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিমি। দু-পথেই শেয়ার জিপ চলে। সময় লাগে ৬-৭ ঘন্টা। এবার হলদোয়ানি স্টেশনে নেমে পিথোরাগড় পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। চারজনের শেয়ার গাড়িতে জন প্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা। চার বছর আগে পিথোরাগড়কে ঠিক যেমন দেখে গিয়েছিলাম সেইরকমই আছে। সে বার লক্ষ্ণৌ থেকে ছোট ট্রেনে টনকপুর হয়ে এসেছিলাম। ওই যাওয়া আসার পথে পিথোরাগড়ে রাত কাটানো আর সময় পেলে হেঁটে এদিক-ওদিক একটু ঘুরে দেখা। পিথোরাগড়ের উচ্চতা ৫,৫০০ ফুট।

পিথোরাগড় থেকে ধারচুলা হয়ে দুগতুর পথে

ভোর হতেই বেরিয়ে পড়ি ধারচুলার উদ্দেশ্যে। এপথেও প্রচুর শেয়ার জিপ চলে। দূরত্ব ৯৫ কিমি, জন প্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। পিথোরাগড় থেকে বেরিয়ে ৪২ কিমি ওগলা। এখানে কিছুক্ষণ জলখাবারের বিরতি। ওগলা থেকে রাস্তা দু-ভাগ হয়ে গেছে। একটা গেছে ডিডিহাট,  হয়ে মুন্সিয়ারি অন্যটা জৌলজীবী, ধারচুলা, তাওয়াঘাট। ধারচুলার এপারে ভারত, কালী নদীর ওপর দিয়ে ব্রীজ পেরিয়ে ওপারে নেপাল। এপার-ওপার যাতায়াত অবাধ। নেপালের দিক থেকে প্রচুর লোকজন এদিকে বাজার-দোকান করতে আসে। ব্রীজের এপারে ভারতীয় বিএসএফ (Indian BSF) আর ওপারে নেপালী বিএসএফ। নামমাত্র চেকিং চলে।

ব্যবসায়িক সম্পর্কের পাশাপাশি চলেছে দু-দেশের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও। কালী নদীর ডানতীর ধরে তাওয়াঘাটগামী সড়ক চলে গেছে। পাশেই নেপালের পাহাড়ের পর পাহাড়। বেশিরভাগই রুক্ষ ধুলো ওড়ানো মাটির রাস্তা। রাস্তা ভাঙছে  সমানে, আবার গড়ার কাজও চলছে জায়গায় জায়গায়। হিমালয়ের গহীনে এমনটাই চলে। কালীগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা মিলে এক অপূর্ব সংগম তাওয়াঘাটে। ধারচুলা থেকে তাওয়াঘাট ১৯ কিমি। তাওয়াঘাট কোনো স্থায়ী জনপদ নয়। নদীর ধারে ছোট ছোট বসতি অনেকগুলি---- চায়ের দোকান, হোটেল, রাস্তার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাস।

এখান থেকে ধৌলির উপর সেতু পেরিয়ে রাস্তা চলে গেছে নারায়ণস্বামী আশ্রম, এরপর হাঁটাপথে আরো এগিয়ে মানস সরোবরের দিকে। আমাদের গন্তব্যস্থল ধৌলির ডানতীর ধরে ডারমা উপত্যকার দিকে। ধারচুলা থেকে দুগতুু বা দানতু ৭৫ কিমি হলেও পৌঁছতে সময় লাগে ৫ ঘন্টা। এপথে খুবই কম শেয়ার জিপ চলে। পুরো গাড়ি-ভাড়া ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা। ছোট গাড়ি এপথে চলে না। একে একে পেরিয়ে যাই সোবলা, সেলা, নাগলিং, বালিং প্রভৃতি ছোট ছোট গ্রাম। কয়েক বছর আগেও এই পথটা ট্রেক-রুট ছিল। দুগতু থেকে নেওলা নদী পেরিয়ে ওদিকে একটু ওপরে দানতু গ্রাম। পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গেল।

পৌঁছে দেখি দানতুর সব ঘরবাড়ি বন্ধ, লোকজন নেই। সবাই নীচে ধারচুলাতে নেমে গেছে। শীতের সময়টা দুগতু/দানতু গ্রামের লোকজন নীচে চলে যায়, কিন্তু নভেম্বরের এই প্রথম সপ্তাহেই এত তাড়াতাড়ি নেমে যাবে বুঝতে পারিনি। অগত্যা আবার নদীর এপারে দুগতু ফিরে এসেও দেখলাম একই অবস্থা। বেশিরভাগ গ্রামবাসী সব নীচে নেমে গেছে। অচেনা জায়গাতে বিশেষ করে পাহাড়ের এত ভেতরে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গেলে এই এক ঝামেলা। কিছুই বোঝার উপায় নেই।

ভাগ্যক্রমে কোনরকমে এক জায়গায় মাথা গোঁজার মত একটা আশ্রয় পেয়ে গেলাম। পাহাড়ে এনারাই ভগবান। অসময়ে এমন ভগবানের দেখা আগেও অনেকবার পেয়েছি । বয়স্ক মানুষ স্বামী-স্ত্রী ওনারাও নেমে যাবেন দু-একদিনের মধ্যেই। পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে ওগলার রুটি, ঘরে বানানো ঘি আর সয়াবিনের গরম সবজি বানিয়ে দিলেন। বাইরে আকাশে অজস্র তারা আর রুক্ষ পাহাড়ের ঢেউ। শুনলাম দু-দিন ধরে মেঘলা আবহাওয়ার পর আজই পরিস্কার হয়েছে আকাশ, ঝকঝক করছে। পাথরের তৈরি সাবেকি ঘরে রাত্রিবাস। অন্ধকারে ঘরের প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না, কোন রকমে শুয়ে পড়ি। 

আরও পড়ুন

রানিখেত-শীতলাখেত-কৌশানি-বাগেশ্বর

পঞ্চচুল্লি বেস-ক্যাম্পের পথে | way to Panchachuli Base Camp

ভোরে ঘুম থেকে উঠে গ্রামের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম সূর্যের আলোয় এক এক করে চূড়াগুলি যেন জ্বলে উঠছে, ধীরে ধীরে পাঁচটি চূড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। রাতে বেশ চিন্তা হচ্ছিল, এখান থেকে ৩ কিমি ওপরে পঞ্চচুল্লি বেস ক্যাম্পে থাকতে পারবো কিনা! ওখানেও যদি কেউ না থাকে, বন্ধ করে সবাই যদি নীচে নেমে যায় কি হবে। গ্রামের লোকের মুখে শুনলাম বেস ক্যাম্পে লোক আছে। কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের (KMVN) ইগলু হাট দেখাশোনার দায়িত্বে। খুশীতে মনটা ভরে উঠল। আবহাওয়াও দারুণ। দুগতু থেকে একটু করে এগোতেই যেন এক এক করে শিখরগুলি একদম কাছে চলে আসছে। রাস্তায় কোথাও কোথাও বরফ পড়ে আছে। শক্ত হয়ে বেশ পিচ্ছিল। তাই সাবধানে ওই জায়গাটুকু পেরোতে হচ্ছে। শেষে একটা বাঁক ঘুরতেই সাদা রঙের ইগলু হাটগুলি নজর কাড়ল।

sun rise at panchachuli
সূর্যোদয়ে পঞ্চচুল্লি- ৩ ও ২

কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগমের (KMVN) ইগলু হাট

 পাইন-ফার-বার্চ গাছে ঘেরা প্রকৃতির কোলে পাঁচটি ঘর। খুবই আকর্ষণীয়। দেখলেই মনে হয় আহা! কি সুন্দর। সবকটা ঘরই ফাঁকা এখন। দুজন বাইক নিয়ে এসেছিলেন গতকাল, ওনারা আজ ফিরে যাচ্ছেন। পছন্দমত ৫ নং ঘরটা বেছে নিলাম থাকার জন্য। এই ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে এমন পরিবেশে থাকার এমন সুব্যবস্থার তারিফ না করে পারা যায় না। নীল আকাশের সামিয়ানার নীচে রূপোর মত ঝকমক করছে পঞ্চচুল্লির পাঁচটি চূড়া, এত কাছে মনে হয় ছুটে গেলেই ছুঁতে পারব।

কেমন যেন আত্মহারা হয়ে গেলাম-- " ইয়ে কাঁহা আ গ্যায়ে হাম!" এ যে স্বর্গ! এত কম হেঁটে, বলতে গেলে প্রায় পুরোটাই গাড়ি পথে এসে, এত কাছ থেকে এমন দৃশ্য আর অন্য কোন জায়গা থেকে দেখা যায় কিনা আমার জানা নেই। সত্যিই, আমার দেশ সকল দেশের রাণী! আর তাঁর মাথায় এমন হীরক দ্যুতি। এখন লিখছি, সত্যি বলছি গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আর চোখে জল আসছে আনন্দে! সবকটি ইগলু হাটের জানলা থেকেই পঞ্চচুল্লি দেখা যায়। মরসুমে একটা ঘরে ৮ জন করেও থাকা যায়, ঘরগুলি ভর্তি হয়ে গেলে তাঁবুতেও থাকার ব্যবস্থা আছে। বাইরে যতক্ষণ ইচ্ছা চেয়ারে বসে থাকা যায়। তবে রোদ্দুর না থাকলে হাওয়া আর ঠান্ডার দাপট তীব্র হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে ঠান্ডা হাওয়া। ভুললে চলবে না জায়গাটার উচ্চতা ১৪,০০০ ফুট।

তবে গাছপালায় ভর্তি চারদিক আর রুক্ষ খাঁজকাটা পাহাড়ে ঘেরা।  এই রুক্ষ পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য্যও কিন্তু কিছু কম নয়। জায়গাটায় রোদ্দুর আসে একটু দেরীতে আর চলেও যায় তাড়াতাড়ি। ৫ নং ঘরের পেছন দিকেই কমন-বাথরুম (common-toilet)। সবই বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। আলাপ হল রবির সাথে, যে এখন ইগলু-হাট সামলাচ্ছে। ২৩ ২৪ বছর বয়স। বেশ পরিবেশ সচেতন ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই পাহাড় খুব ভালোবাসে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর এখানেই থাকে। প্রতি মাসে একবার করে ধারচুলা যায় বাড়িতে। আর বাকি চারমাস যখন বরফ পড়ে সব ঢেকে যায় তখন নীচে নেমে যায়। নিজে ট্রেক করে, গাইড হয়েও সঙ্গে যায় বিভিন্ন ট্রেকে। রবি বললো, এপ্রিল-মে  মাস এই অঞ্চল রডোডেনড্রনে ভরে থাকে আর আগস্ট মাসও  ফুলে ফুলে ভরে থাকে বিস্তীর্ণ উপত্যকা। বর্ষাকালে প্রচুর মাশরুম হয় আর তা খুবই সুস্বাদু। বললো, "আমরা তখন শুধু মাশরুম খেয়েই থাকি। তোমরা একবার এসো আগস্টে।"  আমার মতে বর্ষার সময় এদিকের রাস্তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। রবির কথায়, "কই তেমন কিছু সমস্যা হয় না তো।" 

নির্জনতারও একটা সীমা থাকা দরকার। এ যে অসহ্য নির্জন! ধারে কাছে কোন গ্রাম নেই, সেই দুগতু, দানতু। তাই রবি আর ওর একজন সহকারী কি যেন নাম ওদের সাথেই কথা বলে সময় কাটে। মুন্সিয়ারির এটা ঠিক উল্টোপিঠ। তবে মুন্সিয়ারিতে এত কাছ থেকে পঞ্চচুল্লি দেখা যায় না। আবার মুন্সিয়ারির মতো অসাধারণ সূর্যাস্তও এখান থেকে দেখা যায় না। এখান থেকে সূর্যোদয় অনেক সুন্দর দেখা যায়। এক জায়গার সঙ্গে অন্য জায়গার তুলনা করা চলে না, যে যার মত সুন্দর। সবই সুন্দর, শুধু দেখার চোখ চাই।  নভেম্বরের শুরুতেই যা হাড় কাঁপানো ঠান্ডা---- রাতে বাইরে বেরিয়ে আর বাথরুম যেতে ইচ্ছে করে না। সাধারণ খাওয়া-দাওয়া---- ভাত, রুটি, ডাল, সবজি, সুপ। জলখাবারে রুটি, পরোটা, ম্যাগি-- যার যেমন ইচ্ছে। সারাদিনে একঘন্টা করে দু-বার জেনারেটর চালানোর ব্যবস্থা--- মোবাইল, ক্যামেরা তখনই চার্জ দিয়ে নিতে হচ্ছে।

Zero point panchachuli
জিরো পয়েন্টের পথে

জিরো-পয়েন্টের উদ্দেশ্যে | Panchachuli Base Camp to Zero Point.

 ভোরবেলা ঘুম ভেঙে চমকে দেখি লেপ ভিজে গেছে! সবার মুখের কাছে ভিজে। অথচ কোন জায়গা থেকেই জল পড়ছে না। কি ব্যাপার! পরে রবি বুঝিয়ে বলে, যে আমাদের প্রশ্বাস ঠান্ডায় জমাট বেঁধে জলের আকারে লেপে জমতে থাকে। অনেকবার ঠান্ডার সময়ও পাহাড়ে গেছি কিন্তু এমনটা আগে হতে দেখিনি। সকালে বাথরুম যাওয়ার সময়ও ছিটকিনিতে জল জমে বরফ-- খুলতেই পারি না! আরো একটা অনাস্বাদিত ভোরের, সূর্যোদয়ের সাক্ষী হলাম, যার বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এত ঠাণ্ডাতে সমানে মোবাইল আর ক্যামেরার ব্যাটারি ডাউন হয়ে যাচ্ছে , ফুল চার্জ দেওয়া থাকলেও আবার ডিসচার্জ হয়ে যাচ্ছে। তাই সূর্যোদয়ের খুব বেশি ছবি তুলতেই পারলাম না গতকাল, আজ দু-দিনই।

রোদ্দুরের তেজে পাহাড়ের গায়ের বরফ বাষ্পীভূত হয়ে কেমন মেঘ হয়ে যাচ্ছে ---- দেখতে থাকি বসে বসে। একটু বেলা বাড়তে এগিয়ে গেলাম জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। আমাদের  সঙ্গী হল রবি। এই বেস ক্যাম্প থেকে জিরো পয়েন্ট ৪ কিমি। বরফে ঢাকা সংকীর্ণ রাস্তাটা পেরিয়ে বেশ প্রশস্ত রাস্তায় এসে পড়লাম। নীচে নেওলা নদীর আঁকাবাঁকা অববাহিকা। আরো এগিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি ব্রহ্ম-পিক উঁকি দিচ্ছে।  এক একটা বাঁক ঘুরতে এক এক রকম দৃশ্যপট। এবার এত কাছে এসে গেছি যেন ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে পঞ্চচুল্লি।

বাঁ-দিক থেকে পঞ্চচুল্লি ৫, ৪, ৩, ২, ১....একদম ডানদিকে নাগালফু। সামনেই মেওলা হিমবাহ, সোনা হিমবাহ---- মাঝে গভীর খাদ। শেষ আধ-কিমি চড়াই ভেঙে উঠলে একদম শেষপ্রান্তে, খাদের ধারে পৌঁছে যাওয়া যায়।প্রকৃত অর্থেই জিরো পয়েন্ট। এই আধ-কিমি পুরো বরফের মধ্যে পা ডুবিয়ে উঠতে হল। হঠাৎ করেই বাঁ-দিকের পাহাড়ের গা থেকে বরফের চাঙর খসে পড়ল গুম গুম আওয়াজ করে, সঙ্গে রবি না থাকলে ভয়ই পেতাম। আর এই শেষ আধ-কিমি ওঠার সাহসও পেতাম না। ওপরে উঠে একটা পাথরে বসে বেশ কিছুক্ষণ উপলব্ধি করলাম এই বিশালতাকে, নীল আকাশকে আর ভাবি এখান থেকে আগামীকাল ফিরে যাবো ঘিঞ্জি ধারচুলায়। কোথা থেকে কোথায়! স্বপ্ন থেকে বাস্তবে---- আর এর মাঝে ব্যবধান শুধু একটা খাদ।

এত বাঙময় হতে পাহাড়কে আগে কখনো দেখিনি। গিরিশিখরের এত কাছেও বোধহয় আগে আসিনি কখনও, এতটা কাছ থেকে হিমালয়ের শিরা-উপশিরাকে প্রত্যক্ষ করবো ভাবিনি। হাত বাড়ালে ছোঁয়া না গেলেও মন দিয়ে ছুঁয়ে দেখা যায় ঠিকই। বেলা বাড়তে পঞ্চচুল্লির দিকে সূর্য ঘুরে যাওয়ায় কিছুটা ঘোলাটে লাগে। রোদ্দুরের যা তেজ! গা জ্বালা করছে। আবার না থাকলেও ঠান্ডায় হাড় কেঁপে যায়। আমাদের তাড়া নেই। দুপুর দুপুর ফিরে আসি ইগলু হাটে। আজও এখানে থাকবো। প্রথমে ঠিক ছিল একদিন দানতু, একদিন ইগলু হাট আর একদিন দুগতুতে থাকবো কিন্তু এখন তো কেউ নেই  গ্রামে, তাই এখানেই থেকে গেলাম। একটু সময় দেওয়া ভালো পাহাড়কে। তাড়াহুড়োয় শুধু যাতায়াত হয়, দেখা হয় না। হিমালয়ের এই এতটা গভীরে এসে তাড়াহুড়ো করলে কি চলে! বারবার তো আর আসা হবে না। দু-দিন দু-রাত ইগলু হাটে কাটিয়ে ফিরে চলি দুগতু। দুগতু থেকে আবার ধারচুলা, পিথোরাগড় হয়ে লালকুঁয়া।

কিভাবে যাবেন | how to visit Panchachuli Base Camp.

হাওড়া থেকে হাওড়া-কাঠগোদাম বাগ এক্সপ্রেস রাত ৯-৪৫ মিনিটে ছেড়ে তৃতীয়দিন সকাল ৯-৩০ মিনিটে কাঠগোদাম পৌঁছোয়। কাঠগোদামের ৫ কিমি আগে হলদোয়ানি নেমে শেয়ার জিপে পিথোরাগড়। 

হাওড়া-লালকুঁয়া সুপার ফার্স্ট ট্রেন শুক্রবার সকালে হাওড়া ছেড়ে শনিবার সকালে লালকুঁয়া পৌঁছোয়। এটি সাপ্তাহিক ট্রেন। এক্ষেত্রে বাগে

হলদোয়ানি গিয়ে, লালকুঁয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসে ফেরা ভালো। ফেরার ট্রেন লালকুঁয়া থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৭-২০ মিনিটে, রবিবার হাওড়া পৌঁছয় সন্ধ্যা ৭-টা নাগাদ। হলদোয়ানি থেকে লালকুঁয়া স্টেশন আধঘন্টার পথ, লোকাল বাস যাওয়া-আসা করে। অটোও ভাড়া পাওয়া যায়। 

 অন্যপথে, হাওড়া থেকে যে-কোন ট্রেনে লক্ষ্ণৌ পৌঁছে, লক্ষ্ণৌ থেকে ২ কিমি দূরের আইসবাগ থেকে মিটার গেজ শাখায় আইসবাগ-লালকুঁয়া নৈনিতাল এক্সপ্রেসে টনকপুর পৌঁছনো যায়। টনকপুর থেকে শেয়ার জিপে পিথোরাগড়। 

পিথোরাগড় থেকে ধারচুলা যেতেও শেয়ার জিপ পাওয়া যায়। 

ধারচুলা থেকে দুগতু/দানতু শেয়ার জিপ গেলেও সংখ্যায় খুব কম, সারাদিনে একটা কি দুটো। পুরো জিপ ভাড়া করলে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। ৭৫ কিমি যেতে সময় লাগে ৫ ঘন্টা। ছোট গাড়ি চলে না এপথে। 


দুগতু থেকে ৩ কিমি হাঁটাপথে (পুরোটাই চড়াই) পঞ্চচুল্লি বেস ক্যাম্প/ইগলু-হাট। 


পঞ্চচুল্লি বেস ক্যাম্প থেকে ৪ কিমি  হাঁটা পথে জিরো-পয়েন্ট। জিরো-পয়েন্ট যাওয়ার জন্য গাইড নিলে গাইড-চার্জ ১০০০ টাকা। 


(আগে মুন্সিয়ারি ঘোরা না থাকলে, পিথোরাগড় থেকে ওগলা, ডিডিহাট, বিরথি হয়ে মুন্সিয়ারি ঘুরে নেওয়া যায় এই একই ট্যুরে। )


কখন যাবেন | Best time to visit Panchachuli Base Camp.

মে থেকে অক্টোবর ডারমা-ভ্যালি ঘোরার সময়। 

এপ্রিল আর নভেম্বর বরফ থাকতে পারে রাস্তায়। দুগতু/দানতু গ্রামে লোকজন না-ও থাকতে পারে। তাই এই দু-মাস অনিশ্চিত। 

মে-জুন আর অক্টোবর এই তিনমাস সব থেকে ভালো সময়।  

জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর সবুজ পাহাড় আর ফুল দেখার জন্য খুবই ভালো সময়। এ সময় পাহাড়ের স্নিগ্ধ রূপ দেখা যায়। কিন্তু বৃষ্টি-ধ্বসের কারণে রাস্তা অনিশ্চিত/ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে দু-দিন হাতে সময় বেশি রাখা ভালো।

কোথায় থাকবেন | Hotel/Home Stay at Panchachuli Base Camp.

পিথোরাগড়, ধারচুলা সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল আছে। KMVN-এর ট্যুরিস্ট লজও আছে। 

দুগতু/দানতু গ্রাম মিলিয়ে বেশ কিছু হোমস্টে (#Home_Stays) আছে। 

থাকা-খাওয়া ৮০০-১০০০ টাকা করে প্রতিদিন/প্রতিজন (per day/per person)

পঞ্চচুল্লি বেস ক্যাম্পের ইগলু-হাটে (KMVN) থাকা-খাওয়া 

১৩০০ টাকা করে প্রতিদিন/প্রতিজন (per day/per person)

ইগলু-হাট এখনো online-এ বুকিং করা যায় না। 

যে কোনো প্রয়োজনে যেমন হোটেল, হোমস্টে, ইগলু-হাট বুকিং, গাড়িভাড়া, গাইড, ট্যুর-প্ল্যান সবকিছুর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন রবি দুকতালের সঙ্গে। 

ফোন নং: ৯৪১০৫৯৪৭৬৯

(Ravi Duktal 

Ph no/Wap no:

9410594769

রবি যখন ধারচুলায় থাকে তখনই এই নম্বরে ওকে পাওয়া যাবে, পঞ্চচুল্লি বেস ক্যাম্পে থাকলে পাওয়া যাবে না।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন