চটকপুর ভ্রমণ কাহিনী, অফবিট দার্জিলিং উত্তরবঙ্গ | Chatakpur Travel Guide , offbeat Darjeeling , North Bengal

Chatakpur offbeat Darjeeling destination

কার্শিয়াং-সোনাদা- চটকপুর |অফবিট দার্জিলিং 

Kurseong ,Sonada , Chatakpur Offbeat Darjeeling 

করোনার আতঙ্ক, ভয়, ভাবনা কিছুটা ধাতস্ত হতেই টিকিট কেটেই ফেললাম দার্জিলিং মেল-এ। একদম চিন্তা ছিলো না তাও নয়। আপনজনদের জন্য সবসময়ই চিন্তা হয়। কিন্তু পাহাড়ের টানটাও অমোঘ।

ট্রেনে ওঠার দিনও কোথায় যাবো কোন ঠিক ছিলো না। হঠাৎই ঠিক করলাম চটকপুর চলে যাই। নিউ-জলপাইগুড়িতে নেমে একটা ছোট গাড়ি ঠিক করলাম ২৫০০ টাকায়---- গাড়ি ছুটল। খুবই পরিচিত রাস্তা ধরে ছুটে চলেছি  কার্শিয়াং-এর দিকে। এইসময় আকাশ এতটাই পরিস্কার, এত বেলাতেও  কার্শিয়াং থেকে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান।  কার্শিয়াং-এ গরম ম্যাগি-মোমো-চা বিরতির পর টুং। এরপর সোনাদা হয়ে চটকপুরের রাস্তা। ড্রাইভার দাদাকে বার বার বলা সত্ত্বেও উনি সোনাদা পর্যন্ত না গিয়ে দিলারাম দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলেন, এটাই নাকি ঠিক রাস্তা। ব্যস ! এরপর জঙ্গলের মধ্যে কোনওরকমে গাড়ি একটু করে এগোয়। কিছুক্ষণ এই করে চেকপোস্টের ১০ কিমি আগে নামিয়ে দিলেন।  ভাগ্যক্রমে একটা বড়ো গাড়ি পেয়ে গেলাম একটু অপেক্ষা করার পর , অন্য ট্যুরিস্টদের একটি গাড়ি তাতে জায়গা ছিল। আমাদের তিনজনের জায়গা হলো ৫০০ টাকা দিয়ে। আসলে সোনাদা থেকে চেকপোস্ট ২ কিমি। চেকপোস্ট কারণ এই চটকপুর সেঞ্চল অভয়ারণ্যের অন্তর্গত। চেকপোস্টে প্রত্যেকের প্রতিদিনের চার্জ ১২০ টাকা করে আর গাড়ির জন্য ৪০০ টাকা। চেকপোস্ট থেকে ৬ কিমি চটকপুরের রাস্তা পাথুরে আর পুরোটাই চড়াই। এই রাস্তায় ছোট গাড়ি প্রায় চলে না। বুঝলাম , এই রাস্তাটা যাবে না বলেই এত নাটক!

আরও পড়ুনঃ 

দার্জিলিং অফবিট ডেস্টিনেশন লামাহাট্টা-তিনচুলে

ঘন জঙ্গলের মাঝে ছবির মতো নির্জন চটকপুর:-

এখন নভেম্বরের শেষ। ঝকঝকে নীল আকাশে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘার উপস্থিতি সর্বক্ষণ। সকালে ট্রেন থেকেই ওনার দর্শন পেয়েছি, তারপর থেকে তিনি আমাদের সর্বক্ষণ সঙ্গেই আছেন।  চটকপুরের রাস্তায় এসে মনে হচ্ছে একবারে পাশে পাশে চলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের সঙ্গেই। দার্জিলিং থেকে একদম কাছেই চটকপুর, মাত্র ২৫ কিমি। এখান থেকে দার্জিলিং যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। তবে দার্জিলিং-এর ভিড়, জাঁকজমকের রেশ একেবারেই নেই এখানে। একদম নিরিবিলি ছিমছাম ছোট গ্রাম। লোকজনও খুবই কম। সারি সারি পাইন-ধুপি-বাঁশ গাছের ভিড়।চেকপোস্টের পর ৬ কিমি  রাস্তাও যথেষ্ট খারাপ। বড়ো গাড়িতে নাহলে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হবে এখানে। জঙ্গল, পাখি, প্রকৃতি আর নির্জনতা উপভোগ করার আদর্শ জায়গা এই চটকপুর। উচ্চতা প্রায় ৮০০০ ফুট। এখানে শীতের তীব্রতা আছে, কারণ চারদিকে শুধু ঘন-জঙ্গল। মাঝে মধ্যে সাজানো হোমস্টে। হোমস্টেগুলিতে থাকার খরচ ১২০০ থেকে ১৪০০। 

Chatakpur view point

সমগ্র আপার-চটকপুরটাই যেন ভিউ-পয়েন্ট:- Chatakpur View Point

Chatakpur Sightseeing 

লোয়ার চটকপুরে ইকো-রিসোর্টের পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে আপার-চটকপুর। আমরা রোমান-হোমস্টেতে থাকার জায়গা পেলাম।আপার চটকপুরে প্রায় সব হোমস্টে থেকেই তুষারশিখর দেখা যায়। আমাদের ঘরের জানলা থেকেও বাইরের জঙ্গলে ছাওয়া সবুজ প্রকৃতি, কাঞ্চনজঙ্ঘার উদ্ভাসিত রূপ ধরা দেয়। বাইরে বেরিয়েই বারান্দা, সেখান থেকেও দৃষ্টিপথ উন্মুক্ত। পাশেই রান্নাঘর। এখান থেকে সিঁড়ি দিয়ে আরো উঠে গেলে ভিউপয়েন্ট যাওয়ার রাস্তা। ভিউপয়েন্ট বলতে প্যাগোডা আকৃতির একটি ওয়াচ-টাওয়ার। এখান থেকে যতদূর চোখ যায় সীমাহীন ঢেউয়ের মতো পাহাড় আর উপত্যকা, নীচ দিয়ে সরু রুপোলী ফিতের মতো নদী বয়ে চলেছে। যদিও আমার কাছে পুরো আপার চটকপুরই ভিউপয়েন্ট। 

সূর্যাস্ত দেখার পর ঝুপ করেই সন্ধ্যে নেমে এলো। চা-পকোড়া খেয়ে সময় যেন কাটতে চায়না। তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরি। তবে এমন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি নিঝুম গ্রামের রাতেরও একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে।

সূর্যোদয় দেখে কালিপোখরির উদ্দেশ্যে:- Chatakpur to Kalipokhri 

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আবহাওয়া গতকালের মতোই পরিস্কার ঝকঝকে।  ওয়াচ-টাওয়ারের দিকে যাই সূর্যোদয়ের জন্য। ওপরে এতোই ভিড় নীচ থেকেই দেখলাম কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে সূর্যোদযের দৃশ্য। বার বার যা দেখেও আবার দেখতে না পেলে মনটা খারাপ লাগে। পাখিদের কলকাকলিতে জেগে উঠলো আর একটা ভোর, যেসব ভোর আমাদের মতো শহুরে মানুষদের জীবনে খুব কমই আসে। 

জলখাবার সেরে ঘুরে আসতে যাই কালিপোখরির উদ্দেশ্যে, জঙ্গলে ঘেরা একটি পবিত্র জলাশয়। প্রায় আধঘন্টা জঙ্গলের পথে গিয়ে ছোট এক জলাশয়। পাখির ডাক শুনতে শুনতে এগিয়ে যাওয়া। পক্ষীপ্রেমীদের কাছে চটকপুরের আলাদা আকর্ষণ আছে। রোদ তেমন না পরায় পুরো পথটাই আলো-আঁধারি।জলাশয়ের সামনে খোলা আকাশের নীচে  পুজোর স্থান। স্থানীয় অনেকেই দেখলাম লাল চুড়ি দিয়ে মনস্কামনা জানিয়ে পুজো দিয়েছেন। 

আরেকবার পুরো গ্রামটা ভালো করে ঘুরে দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়ে পরলাম দার্জিলিংয়ে পথে। দার্জিলিংয়ে এত কাছে এসে একবার দার্জিলিং না গেলেই নয়। বিশেষ করে আবহাওয়া যখন এতটাই সুন্দর পরিস্কার। দার্জিলিং যতই ভিড় হোক, ঘিঞ্জি হোক এর আকর্ষণ অমোঘ।

কিভাবে যাবেন | How to visit Chatakpur from NJP

* নিউ-জলপাইগুড়ি/শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং-ঘুম-সোনাদা হয়ে চটকপুর যাওয়ার ভাড়া বড়ো গাড়িতে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। 

ভুল করেও দিলারামের রাস্তা ধরবেন না চটকপুরের জন্য। আর একটু এগিয়ে সোনাদা হয়ে ঢুকবেন। দিলারাম দিয়ে বাগোরা, লাটপাঞ্চার, তুরুক, সিটং-এর পথ।

 *শেয়ার গাড়িতে সোনাদা অবধি গিয়ে বাকি ৮ কিমি হেঁটে অথবা বড়ো গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া ১৫০০ টাকা মতো লাগবে।

কখন যাবেন | Best time to visit Chatakpur via Kurseong , Sonada  

যাওয়া যায় সারা বছর তবে বর্ষাকাল বাদ দিয়ে গেলে ভালো। 

অক্টোবর থেকে এপ্রিল উপযুক্ত সময়। 

Chatakpur to Darjeeling distance 21 Km.

Chatakpur to Siliguri distance 53 Km. 

Chatakpur to Sittong distance 44 Km.


কোথায় থাকবেন | Hotels , Chatakpur Homestay  

আমরা ছিলাম আপার-চটকপুরে রোমান হোমস্টে তে 

( ph no:- 9002720129 )

এছাড়া সানরাইজ হোমস্টে, কুলুং হোমস্টে, নরবু ইত্যাদি ১০/১২ টি হোমস্টেসহ বন দপ্তরের ইকো-রিসর্ট

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন