নাগাল্যান্ডের জুকু ভ্যালি | DZUKOU VALLEY NAGALAND
অনেকদিন ধরেই ভেবেছিলাম নাগাল্যান্ডের জুকু ভ্যালি (Dzukou Valley) যাবো। যেখানে ঢেউ খেলানো সবুজ উপত্যকা জুড়ে মেঘ ভেসে বেড়ায়। আর জুন থেকে আগস্ট মাসে এখানে জুকু লিলির দেখা পাওয়া যায় যা আর পৃথিবীর অন্যত্র কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু বাধ সাধছিলো বৃষ্টি। এপথে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর অবধি বেশ ভালো বৃষ্টি হয়, তাই তো এমন সবুজের আধিপত্য। আর যেসময় বৃষ্টি হয় না যেমন নভেম্বর থেকে মার্চ ---- ভ্যালির রঙ এমন সবুজ দেখায় না একটু হলদেটে হয়ে যায়। তবে সারা বছরই জুকু ভ্যালি যাওয়া যায়। ১ লা ডিসেম্বর থেকে ১০ ই ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডের কিসামা গ্রামে হয় হর্নবিল উৎসব তখন বেশ ভিড় হয়-- দেশ- বিদেশ থেকে পর্যটকের সমাগম হয়।
নাগাল্যান্ডের জুকু ভ্যালি (DZUKOU VALLEY NAGALAND) ট্রেক | দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব
যে-কথা বলছিলাম, বাধ সাধছিলো বৃষ্টি কারণ বৃষ্টিতে ভিজলে আমার একটু শারীরিক সমস্যা হয়। আর বৃষ্টি হলে এ-পথে জোঁকের উপদ্রব আছে, সাপও দেখা যায়, পথ পিচ্ছিল, কাদায় ভর্তি থাকে। এতকিছু জয় করার পরও মানে মনে মনে জয় করার পরও জুকুতে ইঁদুরের উপদ্রব আছে শুনে আবার পিছিয়ে এসেছিলাম। জুকুতে বেশ ভালোমত ইঁদুরের উপদ্রব। জুকু ভ্যালিতে থাকার ব্যবস্থা বেসিক-ফেসিলিটির থেকেও নীচে (below-basic-facilities).। ট্রেকিং রুটে যেমন হয় সেই মানসিকতা নিয়ে জুকুতে যেতে হবে।
এবার এতকিছু মাথায় রেখে যখন মনস্থির করলাম নাঃ যাবোই! দেখিই না কত কষ্ট হয়-- এক-দুদিনের তো ব্যাপার, এটাও একটা অভিজ্ঞতা।
Dzukou Valley trek time
ডিমাপুর থেকে কোহিমার পথে
জুকু ভ্যালি যেতে হলে পৌঁছতে হবে ডিমাপুরে ট্রেনে বা প্লেনে। অনেকে গৌহাটি হয়েও আসেন। তবে আমার মনে হয় সরাসরি ডিমাপুর চলে আসাই ভালো। হাওড়া থেকে সরাসরি ডিমাপুর আসার ট্রেন বলতে কামরূপ এক্সপ্রেস। এছাড়া সরাসরি প্লেনেও ডিমাপুর পৌঁছনো যায়। প্লেনে যাওয়া-আসা করলে এটা সপ্তাহান্তিক ট্রেক weekend-trek) হয়ে যায়। কারণ জুকু ভ্যালি ট্রেক করতে মাত্র একদিন লাগে আর নামতে একদিন। মাঝে একদিন থাকলে খুব ভালো হয়, ভ্যালিটাকে এক্সপ্লোর করা যায়।
২৭ শে মে শনিবার আমরা হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেস ধরে ডিমাপুর পৌঁছই রবিবার রাত ১২-টার পর অর্থাৎ সোমবার। চারঘন্টা ট্রেন লেট ছিল। ট্রেনে আসার একটা সুবিধা রেলের রিটায়ারিং রুমে থাকা যায়। ডিমাপুরে রেলের রিটায়ারিং রুম বেশ ভালো, অনলাইনে বুক হয়। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটলে ওই টিকিটেই রেলের রিটায়ারিং রুম বুকিংয়ের সুবিধা আছে।
আমরা রবিবার ২৮ শে মে সন্ধ্যা ৮ টা থেকে পরদিন সোমবার ২৯ শে মে সকাল ৮ টা অবধি ১২ ঘন্টার জন্য ডাবল-বেড এসি ডিলাক্স রুম বুক করি ৫৩৭ টাকায়। আর ২৪ ঘন্টার জন্য করলে ৮০০ টাকা মতো। আমাদের ১২ ঘন্টার বেশি প্রয়োজন ছিল না। অত রাতে রেলের রিটায়ারিং রুমে চেক ইন করেও IRCTC থেকে আমরা ভাত-রুটি-ডাল-সব্জি পেয়েছিলাম। সোমবার সকাল ৮ টার সময় চেক-আউট করে IRCTC এর পাশেই (সকালে IRCTC খোলেনি তখনও) একটা সাউথ-ইন্ডিয়ান খাবারের স্টল আছে, দাঁড়িয়ে খেতে হয়। ধোসা, ইডলি, বড়া পাওয়া যায়। আমরা এখানেই জলখাবার সেরে স্টেশন-লাগোয়া শেয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছই।
এখান থেকে কোহিমা ISBT যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৩৩০ টাকা। কাছেই বাসস্ট্যান্ড ও আছে ভাড়া ১১০ টাকা করে। আমরা শেয়ার ট্যাক্সিতে কোহিমার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। প্রায় ৭৪ কিমি পথ সময় লাগে দেড়ঘণ্টা, রাস্তা দারুণ সুন্দর। ৯-৩০ টায় ট্যাক্সি ছাড়ে আমরা কোহিমা পৌঁছই ১১ টার সময়।
কোহিমা থেকে কিগওয়েমার পথে
কোহিমা ISBT থেকে কিগওয়েমা গ্রামে পৌঁছনোর দুটি উপায়। এক কোহিমা BOC ট্যাক্সি স্টান্ডে গিয়ে ওখান থেকে শেয়ার ট্যাক্সি ধরে। এক্ষেত্রে ISBT থেকে BOC গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে, শেয়ার যায় না। BOC থেকে কিগওয়েমা শেয়ার জিপে ভাড়া ৭০ টাকা। নাহলে কোহিমা ISBT থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সোজা কিগওয়েমা ডন হোমস্টের দোরগোড়ায় পৌঁছনো। ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা। হোমস্টেটি রাস্তার ওপরেই তাই শেয়ার জিপে এলেও অসুবিধা হবে না। ISBT থেকে কিগওয়েমা গ্রামের দূরত্ব ১০ কিমি। কোহিমা ISBT থেকে কোহিমা শহরে ঢোকার পথে বেশ জ্যাম হয়। জ্যাম কাটিয়ে, সবুজ পাহাড়ে ঘেরা কোহিমা শহর দেখতে দেখতে ডন হোমস্টে পৌঁছতে বেলা ১২ টা বাজলো। ISBT থেকে যে গাড়ি ভাড়া করে আমরা ডন হোমস্টে পৌঁছলাম সেই গাড়ির ড্রাইভার নাছোড়বান্দা আমাদের বিস্বেমা গ্রামের কোনো হোমস্টেতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমরা রাজি হইনি। কারণ কিগওয়েমা গ্রাম থেকে কিসামা গ্রাম হাঁটাপথের দূরত্ব। বিস্বেমা গিয়ে থাকলে হর্নবিলখ্যাত কিসামা গ্রাম আর দেখা হবে না কারণ বিস্বেমা আরো ৮ কিমি এগিয়ে।
ফুলে ফুলে সাজানো কিগওয়েমার ডন হোমস্টেতে আমরা একটা অ্যাটাচড-টয়লেট ঘর পেলাম তিনশয্যা বিশিষ্ট। ঘরের বাইরে আরো একটা কমন-টয়লেট, সামনেই বেসিন সবই বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। কমন-টয়লেটে গিজারের সুবিধাও আছে। এখানে থাকা-খাওয়ার চার্জ ৮০০ টাকা জনপ্রতি এরমধ্যে রাতের খাবার, দুবার চা আর জলখাবার ধরা আছে। দুপুরের খাবার প্যাকেজে নেই, আলাদা করে ২০০ টাকা চার্জ লাগে। অর্থাৎ তিনবেলার খাবার ধরে থাকার খরচ জনপ্রতি ১০০০ টাকা।
নাগা হেরিটেজ গ্রাম
আমরা দুপুরে খাবারের (ডাল-ভাত-পাঁপড়ভাজা, পিঁয়াজ দিয়ে আলুভাতে মাখা, পনিরের সব্জি, ডিমভাজা) পর গেলাম কিসামা গ্রাম ঘুরতে। হেঁটেই ঘুরে আসা যায়। কিছুটা ধূলো-ওড়া পথ পেরিয়ে ভেতরের রাস্তা ধরে উঠে গিয়ে খানিকটা গেলেই সবুজ পাহাড়ের কোলে গ্রাম। কিগওয়েমা ও ফিসামা গ্রামের মাঝে অবস্থিত কিসামা, কোহিমা থেকে দূরত্ব ১২ কিমি। এটি নাগা হেরিটেজ গ্রাম বলেও প্রসিদ্ধ। এখানেই হর্নবিল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নাগা উপজাতির(tribal) ঐতিহ্যের(traditional) ধারক ও বাহক হিসেবে অনেকগুলি ঘর বানানো আছে এখানে প্রতিরূপ (replica) হিসেবে। উৎসবে আদিবাসী নৃত্য, খেলা, খাওয়া-দাওয়া হয় । নাগা উপজাতিরা রঙিন সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এখানে একটি সুন্দর চার্চ আছে আর আছে একটি মিউজিয়াম (world war 2 museum)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোহিমা তার স্মৃতি ধরে রেখেছে এই মিউজিয়ামে। বেশ অনেকক্ষণ লেগে গেল কিসামা গ্রাম ঘুরে দেখতে আর ছবি তুলতে।
একরাত ডন হোমস্টেতে
সন্ধ্যার আগে নেমে এলাম হোমস্টেতে। চা এর সঙ্গে নাগাল্যান্ডের স্পেশাল কুকিস এলো, নাম স্নো-কুকিস চাল দিয়ে তৈরি (Ding Wang snow cookies/ Ding Wang rice cookies)। বারান্দায় বসে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল। সামনের পাহাড়ে অন্ধকার হয়ে গেলে ওদিকে কোহিমার আলোগুলো পাহাড়ের বুকে জোনাকির মতো জ্বলে উঠল।পাহাড়ে এই বিকেল থেকে সন্ধ্যে নামার সময়টা আমার যে কি ভালো লাগে! একধরনের পোকার আওয়াজ ক্রমশঃ বাড়ছে আবার কমে যাচ্ছে। গরম পরার সময় এরা নাকি এভাবে ডাকতে থাকে। সন্ধ্যার পর কিছুই করার থাকেনা তাই আগামীকালের জন্য প্রস্তুত হই। এখানে ভালোই নেটওয়ার্ক আছে, ইলেক্ট্রিসিটি ও, ফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার-ব্যাঙ্ক সব চার্জ দিয়ে রাখি।
জুকুতে এসব কিছুই নেই। অবশ্যই ভালো টর্চ, মোমবাতি সঙ্গে রাখা দরকার জুকুর জন্য। ৮ টা নাগাদ রাতের খাবারের ডাক পরে। দুবেলাই ভাত ডাল পাঁপড় আর একটা আলুর পদ কমন এখানে। তার সাথে ড্রাই-ফিস ভাজা দিয়েছিল। অনেকটা আমাদের মৌরলা মাছের মতো। এছাড়া চিকেন বা পর্ক খেলেও করে দেয়। এখানকার রান্না বেশ ভালো লেগেছে আমার। খেতে খেতেই রোবি দিদি জিজ্ঞেস করেন গাইড লাগবে কিনা, আমরা না বলাতে দিদি ভালো করে রাস্তা বুঝিয়ে দিলেন যাতে পথ না হারাই। কোন জায়গা অবধি টাওয়ার পাওয়া যায় সবটাই বলে দিলেন। সবসময়ই দিদির মুখে হাসি লেগেই আছে। এখান থেকে বিস্বেমা ট্রেক পয়েন্ট অবধি গাড়ি ভাড়া ২০০০ টাকা আর জাখামা দিয়ে গেলে গাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা। রাতেই আমরা গাড়ির জন্য বলে রাখলাম।
৩০ শে মে মঙ্গলবার সকালে ডিম-পাউরুটি দিয়ে জলখাবার সেরে বেরিয়ে পড়ি জুকুর উদ্দেশ্যে। একটা ব্যাগ দিদির হোমস্টেতে রেখে যাই। ফিরে আবার একরাত এখানে থাকবো। দিদিকে বললে দিদি দুপুরের খাবারও প্যাক করে দেন। আগের দিন রাতেই বলে রাখতে হয়, ফ্রায়েড-রাইস আর ডিমসেদ্ধ চার্জ ১০০ টাকা করে।
Dzukou Valley trek route
জুকু ভ্যালি যাওয়ার পথে
কিগওয়েমা থেকে জাখামা পেরিয়ে বিস্বেমা ৮ কিমি। জাখামা থেকেও জুকু ভ্যালি যাওয়া যায় কিন্তু এই পথটা শুনেছি তুলনামূলক কঠিন আর পথ হারানোর ভয় আছে। এই পথে গেলে সঙ্গে গাইড নেওয়া উচিত। আমরা বিস্বেমা দিয়ে যাওয়া-আসার সিদ্ধান্ত নিই। বিস্বেমা গ্রাম থেকে ট্রেক-পয়েন্ট আরো ৮ কিমি।, এই রাস্তাটা বেশ খারাপ। ট্রেক-পয়েন্ট ঢোকার মুখে এন্ট্রি-পয়েন্টে জনপ্রতি ১২০ টাকা করে আর গাড়ির জন্যও ১০০ টাকা এন্ট্রি-ফি দিতে হয়। ট্রেক-পয়েন্টের কাছে আমাদের পৌঁছে দিয়ে গাড়ি ফিরে যায়।
জুকু ভ্যালি যাওয়ার হাঁটা শুরু এখান থেকেই
একটু এগিয়েই শুরু হয় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা। প্রায় ৬০০-৭০০ টা সিঁড়ি উঠতে এক-দেড়ঘণ্টা লেগে যায়। আমরা বৃষ্টি পাইনি তাই চলার পথে অনেকটা সহজ নাহলে বোঝাই যাচ্ছে খুব পিচ্ছিল হয়। একটানা বৃষ্টি হলে জোঁকের উপদ্রব আছে শুনেছি। তাই সঙ্গে একগাদা নুন ও এনেছি। পঞ্চ/রেইনকোট সঙ্গে রাখা উচিত, ব্যাগ/স্যাকের কভারও। তবে এসব আমাদের কিছুই লাগেনি। সিঁড়িপথটুকু পেরিয়ে বেশিরভাগ রাস্তাই সমান মাটির রাস্তা ভ্যালির মধ্যে দিয়ে আর বাঁশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে। বৃষ্টি হলে এই পথও জলকাদায় ভর্তি থাকে। অনেক দূর থেকেই সবুজের মাঝে জুকুর ডর্মিটরি নজরে আসে। ভ্যালির মধ্যে দিয়ে পথটুকু পেরোতে আমাদের আড়াই-ঘন্টা লাগলো। সবমিলিয়ে প্রায় চারঘন্টা লাগলো এই ৮-৯ কিমি পথ হেঁটে উঠতে। জুকুর উচ্চতা প্রায় ৮,০০০ ফুট।
Dzukou Valley trek distance
জুকু ভ্যালিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
দুপুর দুটো নাগাদ পৌঁছেই খোঁজ করি কটেজের। সবকটা কটেজ ই আজ খালি ছিল এতক্ষণ। আমাদের আগে আগে আরো একটা দল এসেছে ওরা তিনটে কটেজ নিল আমরা একটা কটেজ নিলাম ভাড়া ১৫০০ টাকা। মোট ৫ টা কটেজ, এখনও একটা খালি আছে। তবে আগামীকাল আবার তিনটে কটেজ বুকিং আছে। কটেজগুলি অ্যাটাচড টয়লেট সমেত কিন্তু জলটা বাইরে থেকে আনতে হয়। কটেজের বাইরেই পাইপ দিয়ে জলের ব্যবস্থা আছে। কটেজ পেয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম কারণ কমন টয়লেট বেশ নোংরা। আর আমরা আগামীকালও জুকুতে থাকবো।
ডর্মিটরিতে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা হয়, মেঝেতে ম্যাট পেতে শুতে হয় একসাথে অনেকজন থাকতে পারে। দুটো ডর্মিটরি আছে একটা কাঠের আর একটার মেঝেটা সিমেন্টের। ম্যাট, কম্বল সবই ভাড়া পাওয়া যায় ৫০ টাকা করে, মোটা কম্বল বা ব্লাঙ্কেট ভাড়া ২০০ টাকা একদিনের জন্য। কটেজে খাট-বিছানা-বালিশ সবই আছে আলাদা করে কিছু ভাড়া করতে লাগে না। তবে খুব একটা পরিস্কার নয়। জুকুতে ইঁদুরের উৎপাত আছে। একমাত্র টেন্টে থাকলেই ইঁদুরের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় মনে হয়।
এখানে টেন্টও ভাড়া পাওয়া যায়। দুজন থাকার মতো টেন্টে একদিনের ভাড়া ৮০০ টাকা, একটা স্লিপিং-ব্যাগ ২০০ টাকা। কিগওয়েমার ডন হোমস্টেতেও স্লিপিং-ব্যাগ ভাড়া পাওয়া যায় একরাতের জন্য ১০০ টাকা। নিজস্ব টেন্ট থাকলে বড়ো টেন্ট পিচিংএর চার্জ ৩০০ টাকা, ছোট টেন্ট ২০০ টাকা সবই একরাতের জন্য। আমরা জানতাম এখানে কটেজ স্পট বুকিং হয়। তবে যারা ট্রেক অর্গানাইজ করে সবাই প্রি-বুক করে রাখে, দেখলাম। ওই ফোন বা ম্যাসেজ করে। পাহাড়ের ওপর এক জায়গায় গেলে টাওয়ার পাওয়া যায়। তবে অনেকটাই উঠতে হয়। আমরা এই পথে বেশ খানিকটা উঠেও ছিলাম। ওপর থেকে উপত্যকা, কটেজ, ডর্ম সবটা দেখা যায়।
এখানে খাওয়া-দাওয়া বলতে ম্যাগি ৮০ টাকা, ওমলেট ৮০ টাকা, ডাল-ভাত-সব্জি ২৫০ টাকা, পর্ক-রাইস নিলে ৩০০ টাকা। চা ৩০ টাকা। আর তেমন কিছু পাওয়া যায় না। অলস বিকেল কেটে যায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভ্যালির দিকে তাকিয়ে। অদ্ভুত একটা আলোয় ভরে যায় আকাশ আর ভ্যালির বুকে চলে রঙ বদলের খেলা। তারপর চাঁদ ওঠে, সন্ধ্যা নামে।
তিনদিন পর পূর্ণিমা! শুধু এই মুহূর্তটার জন্যই জুকুতে একদিন থাকা যায়। ভ্যালিতে কর্মরত ছেলেদুটির সঙ্গে গল্প করি, আলাপ জমলে বলে ওদের ফোন নম্বরে (WhatsApp No.) মেসেজ করে এখানে কটেজ প্রি-বুক করা যায়। কিন্তু ওরা এখানকার স্থায়ী কর্মচারী নয়।
এখানে সন্ধ্যা ৬-৩০ টা নাগাদ ডিনার দিয়ে দেয়। রাতটা আমরা ম্যাগি খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। রাতের বেলায় বেশ জাঁকিয়ে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে প্রায় ৪৬ জনের একটা কলেজ গ্রুপ এসে জড়ো হল হৈ হৈ করে। প্রায় মাঝরাত অবধি চললো ওদের টেন্ট-পিচিং, খাওয়া-দাওয়া আর গল্পগুজব। আমরা কটেজে গিয়ে শুয়ে পড়লাম অন্ধকারে। আমাদের পাশের কটেজটাই খালি ছিল, সেটাও ভর্তি হয়ে গেছে এতক্ষণে।
চলবে............