শঙ্করপুরে নিরিবিলি সৈকত-যাপন | Shankarpur Digha Travel Guide

 যারা একটু নির্জন নিরিবিলি, একান্ত সৈকত-যাপন পছন্দ করেন তাদের জন্য অন্যতম সেরা ঠিকানা হতে পারে দীঘার পাশেই শঙ্করপুর। অনেক আগে দীঘা থেকে ঘুরে গেলেও থাকা হয়নি শঙ্করপুরে। তারপর একবার একটি প্রাইভেট হোটেলে ছিলাম, সেবার ছিল পূর্ণিমা। দীঘা থেকে শঙ্করপুরের দূরত্ব প্রায় ১৫-১৬ কিমি, গাড়িতে আধঘন্টার পথ। আসলে কোন জায়গা থেকে এসে একজায়গা ঘুরে চলে যাওয়া আর দুদিন থেকে সেই জায়গা উপভোগ করার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য। একটা জায়গাকে বুঝতে বা চিনতে হলে একটু সময় দিতে হয় অন্ততঃ একটা রাত। অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের তুলনায় শঙ্করপুর প্রচারের দিক দিয়ে একটু পিছিয়েই আছে। বোধহয় একদিক দিয়ে ভালোই।

Shankarpur Digha

শঙ্করপুরে সমুদ্রের কাছাকাছি থাকার জায়গা

সমুদ্রের কাছাকাছি থাকার জায়গা এখানে বেনফিশের কিনারা ও তটিনী লজ। এখান থেকে সমুদ্র পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ।

আমরা অনলাইনে দুদিনের জন্য বুকিং করেই এসেছি। দ্বিশয্যা এসি ঘরের ভাড়া ১২০০ টাকা, নন-এসি ঘরের ভাড়া ১০০০ টাকার মধ্যে। তবে এসি ঘরগুলি সব ওপরে, নীচে অর্থাৎ গ্রাউন্ড-ফ্লোরে সব নন-এসি ঘর। সঙ্গে বয়স্ক মানুষ থাকলে এটা খেয়াল রাখবেন। এখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে, বেশ ভালোই। পাশেই আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিশারিজ কর্পোরেশনের মৎসগন্ধা, ঊর্মি কমপ্লেক্স।

দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা গেলাম সমুদ্রের ধারে। সমুদ্রে যাওয়ার পথে দু-তিনটি ছোট দোকান আছে যেখানে চা, ডিম-টোস্ট, ঘুগনি, মুড়ি এসব পাওয়া যায়। তারপর সার দিয়ে ঝাউ-ইউক্যালিপ্টাস গাছের জঙ্গল। অনেক পাখিও আছে। আর একটু এগিয়ে ডানদিকে অনেকগুলি নৌকো বাঁধা আছে। শঙ্করপুর একটি মৎস বন্দর। সামনেই চম্পা নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

আমরা বাঁ-দিক দিয়ে ঘুরে সমুদ্রের ধারে বীচে নামলাম। বেশ খানিকক্ষণ জলে হুটোপুটি করে ফিরে এলাম হোটেলে। এসে অবাক হয়ে দেখি কাঁচের জানলার বাইরে কি সুন্দর একটা মাছরাঙা বসে আছে! আমাদের দেখে উড়ে গিয়ে সামনের একটা গাছে বসল। দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে দেখি এদিকটা পুরো জঙ্গল আর প্রচুর পাখির আসা-যাওয়া লেগেই আছে।

সকালবেলা ঘুম ভেঙে দেখি গতকালের মাছরাঙাটা আবার এসেছে জানলার ধারে। দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেল। তারপর কালকের মতোই সামনে একটা গাছে গিয়ে বসল। আমি এই সুযোগে কয়েকটা ছবিও তুলে নিলাম। আরো কত পাখি। তারপর ক্যামেরা নিয়ে বেরোলাম সমুদ্রের ধারে।

সমুদ্রের ধারের গাছগুলোতেও প্রচুর পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে, ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। ভোরবেলা ফাঁকা সমুদ্রের ধারে হাঁটতেও দারুণ লাগে! আজ সারাদিন বরাদ্দ সমুদ্রে হুটোপাটি আর স্নানের জন্য। আসা-যাওয়ার পথে একটা দোকানে জলখাবার সেরে হোটেলে ফিরে আসি সমুদ্রে স্নান করতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে। সমুদ্রে এলে স্নান করা আর শাঁস ওলা ডাব খাওয়া তো ছাড়া যায় না। তবে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে স্নান করা উচিত। বিশেষ করে এমন নিরালা নির্জন সমুদ্র সৈকতে স্নানের সময় বেশি সতর্ক থাকা উচিত কারণ বিপদ হলে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। ভালোই স্নান করা যায় এখানে, বেশ নিজেদের মতো। দীঘার মতো গায়ের কাছে লোকজন চলে আসে না। আমরা প্রায় দুঘন্টা সমুদ্রে স্নান করে ফিরে যাই হোটেলে।

Digha Shankarpur

কিভাবে যাবেন

১২৮৫৭ তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, হাওড়া স্টেশন থেকে সকাল ৬-৪৫ এ ছেড়ে দীঘা স্টেশন পৌঁছয় সকাল ১০-০৫ এ। দীঘা রেল স্টেশনটি নিউ-দীঘাতে।

নিউ-দীঘা থেকে শঙ্করপুরের  দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি। আগেই রামনগর স্টেশনে নেমেও শঙ্করপুর চলে আসা যায়।

১৮০০১ কান্ডারী এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশন থেকে দুপুর ২-২৫ এ ছেড়ে দীঘা স্টেশন পৌঁছয় বিকেল  ৫-৫০ এ।

ধর্মতলা, ডানলপ, শ্রীরামপুর, বাবুঘাট থেকে দীঘা যাওয়ার বাস ছাড়ে। বাসে গেলে শঙ্করপুরের কাছাকাছি স্টপেজ ১৪-মাইলে নামতে হবে।

কোথায় থাকবেন

বেনফিশের তটিনী, কিনারা । অনলাইনে বুকিং হয়। ফিশারিজ এর মৎসগন্ধা, জোয়ার, ঊর্মি। এছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি হোটেল আছে।

জয়চন্ডী পাহাড়, পুরুলিয়া

বর্ষায় অযোধ্যা পাহাড়, পুরুলিয়া ভ্রমণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন