এবারে হিমাচল প্রদেশে এসে আমরা ছুঁয়ে এসেছি তীর্থণ উপত্যকা, সেরাজ উপত্যকা, সাইঞ্জ উপত্যকা। এবার যাচ্ছি পার্বতী উপত্যকা। যদিও পার্বতী উপত্যকায় আমরা এবার শুধুই কাসোল, মণিকরণ যাচ্ছি। কিন্তু পার্বতী উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর ট্রেকপথ, তারমধ্যে কালগা, পুলগা, ক্ষীরগঙ্গা, গ্রাহাণ, মালানা, চালাল উল্লেখযোগ্য। তোশ একটি সুন্দর গ্রাম, এখানে বাস বা গাড়িতে যাওয়া যায়।
পার্বতী উপত্যকা কাসোল-মণিকরণ
সানগড় থেকে ভুন্টার
সাইঞ্জ উপত্যকার সানগড় থেকে ঠিক সকাল ৮-টার সময় বাস ছেড়ে দিল। ফেলে আসা পাহাড় জনপদ পথ-ঘাট সব আরো একবার দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম অট। এবার কুলুর পথে।সানগড় থেকে কুলুর দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিমি। আমরা কাসোল যাবো তাই কুলু অবধি না গিয়ে ১০ কিমি আগেই ভুন্টারে নেমে গেলাম। মানালি গেলে কুলু অবধি গিয়ে আবার অন্য বাসে মানালি। কুলু থেকে মানালির দূরত্ব ৪০ কিমি। আমরা ভুন্টারে নেমে একটু এগিয়ে বাসস্ট্যান্ডে গেলাম। কাসোল যাওয়ার বাসে বেশ ভিড়, তাও কোন রকমে বসার জায়গা পেলাম।
ভুন্টার থেকে কাসোল
গতকাল বৃষ্টির জন্য রাস্তায় ধ্বস নামার কারণে এদিকে বাস চলাচল বন্ধ আছে তাই এই অবস্থা। ভুন্টার থেকে কাসোল ৩০ কিমি। পার্বতী নদীর পাশ দিয়ে রাস্তা। এদিকে জায়গায় জায়গায় রাস্তা বেশ খারাপ। জরি পেরিয়েই বাস আর যাচ্ছে না। জরি থেকে কাসোল ৮ কিমি। এখান থেকে গাড়ি যাচ্ছে। এই জরি থেকেই মালানা গ্রাম যেতে হয়। গাড়িপথে মালানা নালা অবধি গিয়ে শেষ ৪ কিমি হেঁটে যেতে হয়। আমরা বাস থেকে নেমে জরি থেকে কাসোলের দিকে একটু এগিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট দেখলাম বেশ ভালো লাগল। রেস্টুরেন্টটি বেশ খোলামেলা হওয়ায় এখান থেকে পার্বতী নদীর বয়ে চলা, আশেপাশে পাহাড়ের দৃশ্য বেশ সুন্দর। কিছুক্ষণ রেস্টুরেন্টে কাটিয়ে আলু পরোটা, এগ পরোটা, কফি খেয়ে আরো একটু এগিয়ে গেলাম। মনিকরণ যাওয়ার জন্য এখন এদিকে খুব ভিড় আর জ্যাম। লাইন দিয়ে গাড়ি বাইক দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ৫০০ টাকা দিয়ে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে কাসোল পৌঁছলাম।
আগের বার মণিকরণ দর্শনের স্মৃতি
এত ভিড় দেখে ঠিক করলাম আজ মণিকরণ যাবো না। আগামীকাল ভোরবেলা যাবো তাহলে ভিড় কম হবে। অনেক বছর আগে মানালি থেকে মণিকরণ এসেছিলাম রাতে, রিজার্ভ গাড়িতে। তখন ধুম জ্বর ছিল। মাসটা ছিল নভেম্বরের শেষ। রাতের জার্নিতে রাস্তা কিছুই দেখতে পাইনি। শুধু মনে আছে গুরুদোয়ারাতে রাতের খাবার খেয়েছিলাম আর জ্বর নিয়ে ওই ঠান্ডা জলে থালা বাটি মাজতে হয়েছিল। গুরুদোয়ারার লঙ্গরখানায় অনেক মানুষের একসাথে খাওয়ার ব্যবস্থা-- সকালের চা থেকে দুপুরের খাবার, রাতের খাবার পর্যন্ত। সবাই তখনও উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করছিল। অত রাতেও অনেক লোক ছিল। উষ্ণ প্রস্রবনের পাশে তৈরী হয়েছে স্নানাগার এমনকি এখানকার হোটেলেও পাইপের মাধ্যমে উষ্ণ প্রস্রবনের (hot spring) জল এনে স্নানের ব্যবস্থা আছে। সালফার মিশ্রিত এই জলে স্নান করলে শরীরের ব্যথা ও চর্মরোগের উপশম হয়। স্বল্প মূল্যে থাকা যায় গুরুদোয়ারাতেও।
আগের বার রাতের বেলা এসেছিলাম বলে সেটাও একটা কারণ এইবার সকালবেলা মণিকরণ যাওয়ার।
কাসোলে হোটেল ঠিক করে বিকেলটা আমরা এখানকার নেচার পার্কে কাটালাম। তারপর বাজার এলাকা, ব্রীজের ওপারে, এদিক-ওদিক কিছুটা ঘুরে লোকজন দোকানপাট দেখে মোমো খেয়ে, একটা বেকারিতে কেক কফি খেয়ে সন্ধ্যেটা কেটে গেল। একটা পাঞ্জাবী ধাবায় রাতের খাওয়া সারলাম। এখানে অনেক ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। কাসোলে ইজরায়েলি পর্যটকের আধিক্যর জন্য ইজরায়েলি রেস্টুরেন্টও অনেক।
কাসোল থেকে মণিকরণ দর্শন
ভোরবেলা একটা গাড়ি ভাড়া করে গেলাম মনিকরণ। কাসোল থেকে মনিকরণ একদম কাছেই, ৫ কিমি।গাড়ি ভাড়া করে গেলে যাওয়া-আসা দাঁড়িয়ে থাকা সব মিলিয়ে ছোট গাড়ির ভাড়া ৭০০ টাকা। এদিকে বাসও আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু আজ আমাদের তাড়া আছে কারণ রাতে চন্ডীগড় থেকে ফেরার ট্রেন। তাই গাড়ি ভাড়া করে নিলাম। জঙ্গল আর হিমালয় পর্বতে ঘেরা উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে পার্বতী নদী, নদীর ধার ধরে কিছুক্ষণ গিয়েই পৌঁছে গেলাম মনিকরণ। এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণকে ঘিরে ছড়িয়ে আছে নানান জনশ্রুতি ও পৌরাণিক কাহিনী। শিখ ও হিন্দু দুই ধর্মেরই পবিত্র তীর্থস্থান মনিকরণ। পার্বতী নদীর উষ্ণ প্রস্রবণকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গুরুদোয়ারা আর বেশ কিছু মন্দির।
যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই, এইসময়টা বেশ ফাঁকা। আজ নীলষষ্ঠী। এখানকার শিব-পার্বতী মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢেলে প্রসাদও পেলাম। জায়গায় জায়গায় জল টগবগ করে ফুটছে আর ধোঁয়া উঠছে! অদ্ভুত প্রকৃতি, অদ্ভুত তাঁর সৃষ্টি! কোথাও অনেকগুলি হাঁড়ি বসানো আছে, চাল সেদ্ধ হচ্ছে আবার কোথাও এক বস্তা আলু ফেলে রেখেছে সেদ্ধ হওয়ার জন্য। কেউ কেউ মগে করে জল নিয়ে গায়ে ঢালছে। এরপর গুরুদোয়ারা দর্শন করে, গরম-গুহা (hot-cave) দেখে, গুরুদোয়ারার লঙ্গরখানায় চা পান করে ফেরার পথ ধরলাম।
আজ হোটেলে ফিরে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে আবার বাস ধরে যেতে হবে কুলু। তারপর চন্ডীগড় থেকে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরা। গতকাল সন্ধ্যে থেকেই আবার স্বাভাবিক হয়েছে রাস্তা। নিয়মিত বাস চলাচল করছে। আমরা হোটেল থেকে বেরিয়েই কুলুর বাস পেয়ে গেলাম।
তীর্থন উপত্যকা, হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণ
কখন যাবেন কাসোল-মণিকরণ
কাসোল-মণিকরণ সারা বছর যাওয়া যায়। তবে ভুন্টার থেকে কাসোলের রাস্তা জায়গায় জায়গায় বেশ খারাপ তাই বর্ষাকাল বাদ দিয়ে গেলেই ভালো।
কিভাবে যাবেন কাসোল-মণিকরণ
নিকটতম রেলস্টেশন চন্ডীগড়। আর নিকটতম বিমানবন্দর ভুন্টার। ট্রেনে বা প্লেনে চন্ডীগড় পৌঁছে, চন্ডীগড় থেকে বাস/গাড়িতে ভুন্টার হয়ে পৌঁছনো যায় কাসোল। অনেকেই মানালিতে থেকে দিনে দিনে মণিকরণ ঘুরে আবার মানালি ফিরে যান। মানালি থেকে মণিকরণের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিমি।
যেকোন ট্রেন বা প্লেনে দিল্লী পৌঁছে, বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নেওয়া যায় কাসোল- মণিকরণ।
১২৩১১ হাওড়া-কালকা নেতাজি এক্সপ্রেস রাত ৯-৫৫ এ হাওড়া স্টেশন ছেড়ে পরদিন রাত ১-৩৫ এ চন্ডীগড় স্টেশন পৌঁছয়। সময় লাগে ২৭ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
এই ট্রেনেই আমরা যাওয়া আসা করেছি।
১২৩১২ কালকা-হাওড়া নেতাজি এক্সপ্রেস রাত ১-২৫ এ চন্ডীগড় স্টেশনে পৌঁছে, পরদিন সকাল ৮-০৫ এ হাওড়া স্টেশন পৌঁছয়। সময় লাগে ৩০ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
কোথায় থাকবেন
কাসোলে থাকার অনেক হোটেল। পার্বতী নদীর ধারে অনেক ক্যাম্প।
ভালো অবস্থানে বাজেট হোটেলের মধ্যে পূর্ণিমা গেস্ট হাউস কাসোল ঢুকতেই ডানদিকে।
Purnima Guest House
Ph no:- +919816421385
07018235945
পূর্ণিমা গেস্ট হাউসের প্রায় লাগোয়া ক্যাফে ৪-২০ গুড ভাইব'স অনলি।
Cafe 4-20 Good Vibes Only
Ph no:- +918847282420
অ্যালপাইন গেস্ট হাউস, পার্পল গেস্ট হাউস এরকম একই দামের ও মানের আরও কিছু হোটেল আছে পর পর।
একটু দামী হোটেল পার্বতী কুটির (Parvati Kuteer ), মোক্ষ রিভার সাইড রিসোর্ট (Moksha Riverside Resort & Spa) এটা একটু বাইরে মণিকরণ যাওয়ার রাস্তায়।