বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ ভ্রমণ বৃত্তান্ত | Bakkhali Tour Plan

কাছাকাছি কোথাও যেতে চাইলে যে কোন ঋতুতে বকখালি বেশ ভালো। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সুন্দরবনের অন্তর্গত বকখালি। এখানে বঙ্গোপসাগর শান্ত। বড়ো বড়ো ঢেউ নেই তাই স্নান করার মজা তেমন পাওয়া যায় না বলে খুব একটা ভিড় হয় না। কিন্তু বকখালি সমুদ্র সৈকতের এক নিজস্বতা আছে।

বকখালি সমুদ্র সৈকত

বকখালি সমুদ্র সৈকত |Bakkhali Sea Beach

অনেকেই বলেন বকখালিতে সমুদ্র অনেক দূরে, জল নেই। আমি বলবো পারলে একটু পূর্ণিমা/ অমাবস্যা দেখে সমুদ্রে যান, জল পাবেন। আমরা কিন্তু চাঁদিপুরে গিয়েও হতাশ হইনি। পূর্ণিমা দেখে গিয়েছিলাম, স্নান করেছিলাম, ঝিনুক কুড়িয়েছিলাম। আবার সমুদ্রের ধীরে ধীরে দূরে সরে যাওয়া যেমন দেখেছিলাম, সমুদ্রকে প্রবল গর্জন করে এগিয়ে আসতেও দেখেছিলাম। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। সব জায়গা একইরকম হবে, এমন তো নয়। প্রত্যেকের দেখার চোখ আলাদা। কেউ কিছু প্রত্যাশা করে গেলেন অথচ তেমনটা পেলেন না, তাই হতাশ হলেন। অনেকসময় যেখানে দেখার কিছুই থাকে না, সেখানেই দেখার একটা অন্য চোখ খুলে যায়।

শঙ্করপুরে নিরিবিলি সৈকত-যাপন

ফ্রেজারগঞ্জ ও কার্গিল সমুদ্র সৈকত| Fraserganj , Kargil Sea Beach , Bakkhali

এবার আসি বকখালির কথায়। বকখালিতে না থেকে পারলে ফ্রেজারগঞ্জে থাকুন। এটি একটি ফিশিং হারবার। আমার বেশ পছন্দের জায়গা বেনফিশের সাগরকন্যা। এখান থেকে ১.৫ কিমি হেঁটে গেলে সানসেটের জন্য বিখ্যাত কার্গিল সমুদ্র সৈকত। গ্রামের ঘর-বাড়ি পেরিয়ে এই পথটুকু হেঁটে যেতে ভালোই লাগবে। সকালেও ফাঁকা থাকে এই বীচ আর খুবই মনোরম। বীচ ধরে হেঁটে গেলে পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যায়। এইসব অঞ্চলে এখনো প্রচুর লাল কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়। ফ্রেজারগঞ্জেই আছে গভর্নর ফ্রেজারের ভগ্নস্তূপ বাসস্থান।

যেদিন বকখালি পৌঁছবেন সেদিন বিকেলে কার্গিল বীচে সূর্যাস্ত দেখে চলে আসুন বকখালি বীচে। এখানে প্রচুর দোকানপাট জমজমাট। বীচের ধার ধরে মাছের ছোট ছোট দোকান। এখানে সমুদ্রের টাটকা মাছ ভাজা খেতে পারেন। কিছুক্ষণ এখানে সময় কাটাতে ভালোই লাগবে। ফ্রেজারগঞ্জ থেকে বকখালি সমুদ্র সৈকত ৩ কিমি। 

ফ্রেজারগঞ্জ থেকে জম্বুদ্বীপ | Fraserganj to Jambudwip

পরদিন সকালে জলখাবার সেরে ঘুরে আসুন জম্বুদ্বীপ থেকে। ফ্রেজারগঞ্জ থেকেই বোট ছাড়ে জম্বুদ্বীপ যাওয়ার জন্য। বকখালিতে থাকলে এখানেই আসতে হবে জম্বুদ্বীপ যেতে হলে। এখান যদিও দ্বীপে নামতে দেয় না। তবে যাত্রাটা সমুদ্রের ওপর দিয়ে খুবই উপভোগ্য। তবে বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকে বলে বোট খুব দোলে শুনেছি। এটা অনেকের কাছে এডভেঞ্চার আবার অনেকের কাছে ভয়। আমরা শীতকালে ডিসেম্বর মাসে গিয়েছিলাম বলে খুবই আরামদায়ক ছিল এই যাত্রা। শান্ত সমুদ্র, জলের রঙ কোথাও সবুজ কোথাও নীল! মাঝে মাঝেই ঝাঁকে ঝাঁকে সী-গাল (seagull) উড়ে যাচ্ছিল। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো বাঁ-দিকের সাদা বীচে গোলাপফুলের মতো বিছিয়ে আছে লাল কাঁকড়ার দল। বোট ভাড়া একজনের ১৫০/২০০, সময় বিশেষে ওঠা-নামা করে। বড়ো বোট যায়, অনেকজন যাত্রী হলে তবেই ছাড়ে।

হেনরি'জ আইল্যান্ড এ সমুদ্র ও জঙ্গলের স্বর্গ | Henry Island , Bakkhali

জম্বুদ্বীপ ঘুরে হোটেলে এসে স্নান খাওয়া সেরে চলে যান হেনরি'জ আইল্যান্ড। সঙ্গে গাড়ি থাকলে খুবই ভালো নাহলে টোটো বা গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে। ফ্রেজারগঞ্জ থেকে হেনরি'জ আইল্যান্ড ৮ কিমি। সমুদ্র ও জঙ্গলের স্বর্গ এই জায়গাটি। যেহেতু এই জায়গাটি সুন্দরবনের অন্তর্গত এখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্য যেমন সুন্দরী, গরাণ, গেঁওয়া গাছের সমারোহ। গাছের শ্বাসমূলগুলি মাটির উপরে দেখতে পাওয়া যায়। যা একমাত্র সুন্দরবন অঞ্চলেই দেখা যায়। নির্জন জায়গা বলে এখানেও প্রচুর লাল কাঁকড়ার বাস আর শীতকালে পরিযায়ী পাখি উড়ে আসে। এখানে থাকার জায়গাও আছে। তবে এখানে সমুদ্রে স্নান করা যায় না চোরাবালির কারণে।

মুকুটমণিপুর, বাঁকুড়া ভ্রমণ

বকখালিকে কেন্দ্র করে আরও কিছু টুরিস্ট স্পট | Sight Seeing in Bakkhali

সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় মৌসুনি আইল্যান্ড থেকে। মৌসুনি আইল্যান্ড একটি নির্জন দ্বীপ। কোলাহল, ভিড় থেকে দূরে। এখানে পৌঁছতে হলে চেনাই নদী পেরিয়ে যেতে হবে। প্রায় সারাদিন লেগে যাবে।

বকখালি ঘুরে চলে যেতে পারেন গঙ্গাসাগর। এক্ষেত্রে কাকদ্বীপ স্টেশন নামতে হবে অথবা গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। আবার ফ্রেজারগঞ্জ থেকে লঞ্চেও গঙ্গাসাগর যাওয়া যায়। এখানে থাকার জন্য যুব আবাস (youth hostel ), পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্যুরিজমের লজ বেশ ভালো।

কলকাতা থেকে বকখালির দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিমি। এক্ষেত্রে বকখালি যাওয়া-আসার পথে পড়বে পৈলানের স্বামী নারায়ণ মন্দির। গাড়ি নিয়ে গেলে এটিও একযাত্রায় দেখে নেওয়া যায়। আমরা ফেরার পথে বিকেলবেলা গিয়েছিলাম এখানে।

বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ ভ্রমণ বৃত্তান্ত | Bakkhali Tour Plan

বকখালি কখন যাবেন | Best time to visit Bakkhali , West Bengal

খুব গরমের সময় বাদ দিয়ে সারা বছর যাওয়া যায়।

বকখালি কিভাবে যাবেন | How to visit Bakkhali , West Bengal

শিয়ালদহ থেকে নামখানা অবধি ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে টোটোতে সরাসরি বকখালি বা ফ্রেজারগঞ্জ যাওয়া যায়। 

এছাড়া স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে বাসেও বকখালি পৌঁছনো যায়। 

নামখানা থেকে বকখালি যেতে হলে আগে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীটি পেরিয়ে যেতে হত। এখন নামখানা-বকখালি ব্রীজ তৈরী হয়ে যাওয়ায় আর নদী পেরোতে হয় না। 

এস্প্লানেড থেকে বাসেও সরাসরি বকখালি যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন বকখালিতে | Hotel , Guest House in Bakkhali , West Bengal

বকখালিতে অনেক হোটেল আছে। বুকিং করে না গেলেও চলবে। পৌঁছে পছন্দমতো হোটেল দেখতে পারেন। সবরকম দামের হোটেল পেয়ে যাবেন।

আমরা ছিলাম ফ্রেজারগঞ্জ ফিশিং হারবারে বেনফিশের সাগরকন্যা ও সাগরী গেস্ট হাউসে

এখানে ৭০০ টাকার নন-এসি কটেজ থেকে শুরু করে ১২০০ টাকার এসি ডিলাক্স ঘর আছে ব্যালকনি সমেত। এগুলি সব দ্বি-শয্যা বিশিষ্ট ( double bed room )। নীচে চারশয্যা বিশিষ্ট নন -এসি ঘর আছে দুটি লাগোয়া। ভাড়া ৮০০ টাকা করে। দামের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। তবে গিজার নেই। শুধু ওপরের এসি ডিলাক্স ঘরগুলোতে গিজার আছে। যেসব ঘরে গিজার নেই বালতি করে গরম জল দিয়ে দেয় নাহলে ঘরে ইমারশন হিটার দিয়ে দেয়। এখানে থাকলে গাড়ি নিয়ে এলে বেশি সুবিধা। সঙ্গে ড্রাইভার থাকলে ওনার থাকার জন্য দিন প্রতি ২৫০ টাকা লাগে, ডর্মিটরিতে থাকার জন্য।

এখানে ঘর বুক করতে হলে গুগুলে সার্চ করুন Benfish Lodge Booking System / www.benfishtourism.com 

এখানে বেলা ১১-৩০ টায় চেক-ইন আর চেক-আউট ১১ টা।

এখানে খাবার দাবার একেবারে ঘরোয়া। বাইরে থেকেও অনেকে এখানে খেতে আসেন।

সাগরকন্যার ফোন নম্বর  9733961385

ফ্রেজারগঞ্জ থেকে দূরত্ব : Distance Between

  • বকখালি সমুদ্র সৈকত ৩ কিমি | Fraserganj to Bakkhali 3 k..m.
  • কার্গিল সমুদ্র সৈকত ১.৫ কিমি | Fraserganj to Kargil Sea Beach 1.5 k.m.
  • জম্বুদ্বীপ ৭ কিমি | Fraserganj to Jambudwip 7 k.m.
  • হেনরি'জ আইল্যান্ড ৮ কিমি | Fraserganj to Henry Island 8 k..m.

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন